সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পৌরশহরের ১ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সীমানা বরাবর একটি চলাচলের রাস্তা সংকোচনকে কেন্দ্র করে যে বিরোধের সূত্রপাত, তা এখন ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব পেরিয়ে সামাজিক উত্তেজনা, সহিংসতা ও আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। ঘটনাটি শুধু একটি মারামারি বা মামলা নয়; এটি স্থানীয় প্রশাসন, নগর ব্যবস্থাপনা ও জনস্বার্থ রক্ষার প্রশ্নও সামনে এনেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এজহারনামীয় অভিযুক্ত ও জুতা ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম তার পুরোনো ও নির্মাণাধীন বাড়ির অংশ ব্যবহার করে বসতিপাড়ার প্রায় ৮–১০ ফুট প্রশস্ত একটি রাস্তা সংকুচিত করে ফেলেছেন। প্রতিবেদক সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান, একসময় যে রাস্তাটি দিয়ে মানুষ নির্বিঘ্নে চলাচল করত, সেটি এখন এতটাই সরু যে দুইজন মানুষ একসঙ্গে চলাচল করতেও সমস্যায় পড়ছে। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স বা অগ্নিনির্বাপণ গাড়ির প্রবেশ প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতিকে এলাকাবাসী জনবিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কারণ, রাস্তা কেবল কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের নয়; এটি একটি এলাকার সামষ্টিক অধিকার। স্থানীয়রা এককাট্টা হয়ে প্রথমে বিষয়টি সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন। একাধিক বৈঠক হলেও কোনো কার্যকর সমাধান না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে এলাকাবাসী আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে অভিযুক্ত পক্ষের সঙ্গে তীব্র দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
এই উত্তেজনারই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে এলাকায় মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আনসারুল আলম লিটন এজহার দায়ের করেন। এজহারে অভিযুক্ত হিসেবে খোরশেদ আলম (৪৫), শাওন (২২), জুলেখা (৪০) ও শিরিন আক্তার-এর নাম উল্লেখ করা হয়। মারামারির প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে তৈয়মুর ইসলাম, কিনারুল ইসলাম, সাব্বির, সেলিনা খাতুন, শেফালী বেগম ও হালিমা খাতুন-এর নাম এজহারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
মারামারির ঘটনায় এলাকায় সাময়িক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, বিরোধ দ্রুত নিরসন না হলে পরিস্থিতি আরও সহিংস রূপ নিতে পারে। স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, এখানে মূল সংকটটি ব্যক্তি স্বার্থ ও জনস্বার্থের সংঘর্ষে। রাস্তা দখল বা সংকোচন যদি প্রমাণিত হয়, তবে সেটি কেবল আইন লঙ্ঘন নয়, বরং সামাজিক দায়িত্বহীনতারও প্রতিফলন।
সালিশে সমাধান ব্যর্থ হওয়ায় উভয় পক্ষ শেষ পর্যন্ত আদালতের আশ্রয় নেয়। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার চলমান প্রসিডিউরের সর্বশেষ অবস্থায় বাদী পক্ষ অ্যাডভোকেট কমিশন নিয়োগের জন্য আবেদন করেছে। এ সংক্রান্ত রসিদে ফরম নম্বর ৩৫৮১ এবং বিভাগ নম্বর (এ) ২৩ উল্লেখ রয়েছে। আদালতের পরবর্তী আদেশের ওপরই এখন নির্ভর করছে বিরোধের ভবিষ্যৎ গতি।
এই ঘটনার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। তারা চান—আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাস্তাটির পূর্বাবস্থা ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করা হোক, পাশাপাশি সহিংসতার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ন্যায়সংগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। পীরগঞ্জের এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, সময়মতো প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও পরিকল্পিত নগর ব্যবস্থাপনা না থাকলে ছোট একটি রাস্তার বিরোধও কীভাবে বড় সামাজিক সংকটে রূপ নিতে পারে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.