
শুরু হয়েছে বর্ষা, তাই ঝালকাঠির গ্রামে গ্রামে মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই–বুচনা তৈরির ধুম পড়ে গেছে। হাটে হাটে বিক্রি করে চাঁই বুচনার আয়ে চলছে অসংখ্য পরিবারের জীবন–জীবিকা।
জেলার তিন শতাধিক পরিবার মাছ ধরার এই বাঁশের তৈরি দেশীয় ফাঁদ বিক্রি করে প্রায় চার মাস তাদের সংসার অনেকটা স্বাচ্ছন্দে চলবে। আর মৌসুমী এ কুটির শিল্পটিকে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে ঝালকাঠি শিল্প সহায়তা কেন্দ্র (বিসিক)।
চাঁই–বুচনা বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস প্রধানত বর্ষাকাল হলেও বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত কমবেশি বৃষ্টি হয় বাংলাদেশে। তার ওপর বৈশাখ থেকে নদী ও খাল বিলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছ ধরার ধুম পড়ে যায় নদী–নালা আর খাল–বিল বেষ্টিত ঝালকাঠি জেলায়। আর মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে বহু বছর আগে থেকেই এ জেলার গ্রামগঞ্জে ঘরে ঘরে দেশীয় বাঁশ দিয়ে মাছ ধারার এক বিশেষ ফাঁদ তৈরি হয়ে আসছে। স্থানীয় ভাষায় এগুলোকে চাঁই ও বুচনা বলা হয়। ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে ঝালকাঠিতে গড়ে উঠেছে চাঁই বুচনার বাজার। জেলার ৩০টি হাটে বর্ষার চার মাস বিক্রি হচ্ছে চাঁই–বুচনা। আর তাই জেলার কমপক্ষে তিন শতাধিক গ্রামীণ পরিবার চাঁই– বুচনা তৈরি করে এ মৌসুমী আয় দিয়ে বেশ ভাল ভাবেই সংসার চালান।
জেলা শহরের টাউনহল সড়কে ঝালকাঠির সবচেয়ে বড় চাঁই–বুচনার হাট বসে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার। এছাড়া নলছিটি, ষাটপাকিয়া, বাঘড়ি, নচনমহলসহ ত্রিশটি হাটে সপ্তাহে দু’দিন করে মাসে ৮টি হাটে নিজেদের তৈরি চাঁই–বুচনা বিক্রি করছেন কারিগররা।
ঝালকাঠি শিল্পসহায়ক কেন্দ্র (বিসিক) এর উপ–ব্যবস্থাপক মো. জালিস মাহমুদ জানিয়েছেন, খাল–বিল প্রধান ঝালকাঠির গ্রামীণ দারিদ্র বিমোচনে এ কুটির শিল্পটি একটি সহায়ক শক্তি। চাঁই–বুচনা তৈরির এসব গ্রামীণ কারিগরদের সহায়তার জন্য বিসিক সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবস্থা রেখেছে। কেবল মৌসুমী পেশা নয়, নিপূন এ শিল্পটি গ্রামীণ খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য সম্ভাবনাময় একটি আয়ের পথ তৈরি করে দিয়েছে। তাই জেলার কয়েক হাজার মানুষ এখন চাঁই–বুচনা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খাল–বিল আর নদী প্রধান ঝালকাঠির জন্য এ শিল্পটি হতে পারে একটি আর্থিক খাত। সূত্রঃ বাসস