এম.এ.শাহীন, তারাগঞ্জ,রংপুরঃ
“জোর করে সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর: ৩ লাখ টাকা দাবি ও বাড়ি থেকে গরু নিয়ে গেছে দোকান মালিক”
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার তারাগঞ্জ বাজারে রণজিৎ নামের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে পরিতোষ (২৫) নামের এক দোকান কর্মচারীকে চুরির অভিযোগে আটক রেখে নির্যাতন, জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া এবং তার পরিবারের কাছ থেকে দুটি গরু জোর করে নিয়ে আসার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, অভিযুক্ত ব্যবসায়ী পরবর্তীতে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে আসছেন।
এ ঘটনায় পরিতোষের মা প্রতিমা রানী বাদী হয়ে তারাগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও নয় দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানিয়েছেন তার পরিবার।
ভুক্তভোগী পরিতোষ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পলাশবাড়ী মন্দিরপাড়া গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী অধীর চন্দ্র ও প্রতিমা রানীর ছেলে।
প্রতিমা রানীর জানান, প্রায় দুই বছর আগে তার ছেলে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কেল্লাবাড়ী এলাকার রণজিৎ নামের এক ব্যবসায়ীর তারাগঞ্জ বাজারের মাছ হাটি সংলগ্ন মুদি দোকানে চাকরি নেয়। মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে কাজ করত সে।
সংসারের অভাব অনটন ঘোচাতে ও স্বামী বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হবার কারণে প্রতিমা নিজ বাড়িতে ছোট একটি চা- পানের দোকান দেন।
এরপর থেকেই দোকান মালিক রণজিৎ তার ছেলেকে মিথ্যা অপবাদ দিতে শুরু করেন যে, পরিতোষ দোকানের মালামাল চুরি করে মায়ের দোকানে দেয়।
এতে মনের রাগে ও ক্ষোভে পরিতোষ চাকরি ছেড়ে দিলে গত ১৩ অক্টোবর রণজিৎ কৌশলে পরিতোষকে কেল্লাবাড়ি তার বাসায় ডেকে নিয়ে একটি সাদা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেয় এবং তাকে আটক করে রাখে এবং ওইদিন রাত ১০ টার সময়ে পুলিশ পরিচয়ে অবিনাশ নামের একজন, রণজিৎএর ছেলেসহ পাঁচ–ছয়জন লোক পরিতোষের বাড়িতে আসে।
তারা তার মা প্রতিমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলে তোমার ছেলে তিন লাখ টাকা চুরি করেছে। তাকে আটক করে রাখা হয়েছে। এ সময় তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দোকানের সামনে থেকে ক্রেতাদের সরিয়ে দেয় এবং কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দেয়। এবং দোকানের মালামাল, বাড়িতে থাকা অন্যের আদি নেয়া দুটি শাহীওয়াল গরু (একটি গর্ভবতী), দোকানের টাকা–পয়সা নিয়ে যায়। প্রতিমা কান্নাকাটি ও তাদের হাতে-পায়ে ধরলেও কেউ কিছু শুনেনি। তারা যাবার সময় আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে চলে যাবার সময় বলে টাকা না দিলে তোর ছেলের হাত-পা কেটে গুম করে ফেলবো।
এরপর থেকে তারা প্রতিদিন আরও তিন লাখ টাকা চাচ্ছে। এবং মোবাইল ফোন থেকে টাকার জন্য হুমকি দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রণজিৎ বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “পরিতোষ আমার দোকানের মালামাল বিক্রির নিয়ম ভেঙে নিজের মতো সরিয়ে নিয়েছে। এজন্য আমি বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর উপস্থিতিতে তার কাছ থেকে ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছি। একই রাতে আমার কয়েকজন লোক তার বাড়ি থেকে দোকানের কিছু মালামাল ও দুটি গরু নিয়ে এসেছে, তবে কোনো টাকা নেয়নি।”
ভুক্তভোগীর প্রতিমার পরিবারের দাবি, স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় রণজিৎ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পুলিশও কোনো সাহায্য করছে না, বরং থানায় গিয়েও হুমকি খেতে হচ্ছে।
বর্তমানে পরিতোষ প্রাণ ভয় ও রণজিৎএর দাবীকৃত তিনলাখ টাকার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এম.এ ফারুক জানান, এ বিষয়ে প্রতিমা রানী একটি
অভিযোগ করেছে। প্রতিমা রানীর অভিযোগটির বিষয়ে কোন পদক্ষেপ না নেয়া ও তা নথিভুক্ত করা হয়নি কেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে মুঠোফোনে কল কেটে দেন।