সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ পৌরশহরের আলীপুকুর ঈদগাহ মাঠে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিল ঘিরে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন চিত্র। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের বদলে মাঠজুড়ে যেন রঙিন আলো, দোকানের কোলাহল আর বিনোদনের আমেজ। মূল মাহফিলের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামি আদর্শ প্রচার ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা, কিন্তু বাস্তবে সেই আয়োজনের ছায়া যেন মিশে গেছে মেলার ঝলমলে সাজে।
রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত এই ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে মাঠের চারপাশে গড়ে ওঠে অস্থায়ী বাজার। সেখানে নানা রকম খেলনা, প্রসাধনী, গৃহসজ্জার সামগ্রী, খাবারদাবার ও উপহারসামগ্রীর দোকান বসে। সন্ধ্যা গড়াতেই তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীরা ভিড় জমাতে শুরু করে এই অস্থায়ী বাজারে। কেউ কেনাকাটা করছে, কেউ ঘুরে ঘুরে ছবি তুলছে। পুরো পরিবেশ যেন উৎসবমুখর এক মেলায় পরিণত হয়।
চোখে পড়েছে কয়েকটি দম্পতিকে, যারা হাসি-আনন্দে মেলা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ধর্মীয় পরিবেশের চেয়ে তাদের আগ্রহ যেন বিনোদনকেন্দ্রিক। এ দৃশ্য অনেকের মধ্যেই বিস্ময় জাগিয়েছে। স্থানীয় এক সচেতন নাগরিক ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রতিবেদককে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম এখানে ওয়াজ শুনে আত্মিক শান্তি পাব। কিন্তু এখানে এসে দেখি মেলার কোলাহল,এটা আসলে মাহফিল নাকি মেলা?”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মাহফিলের আসরে কয়েকজন বক্তা বয়ান দিচ্ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তাদের সামনে উপস্থিত শ্রোতা ছিল হাতে গোনা। অন্যদিকে মেলার দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই মন্তব্য করেছেন,“ওয়াজে ঢুকতে হলে আগে মেলার ভিড় ঠেলে যেতে হয়!”
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে এ ধরনের বাণিজ্যিক ও বিনোদনমূলক পরিবেশ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এটিকে সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন, আবার অনেকে মনে করছেন, ধর্মীয় আয়োজনের পবিত্রতা রক্ষায় আয়োজকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল।
পীরগঞ্জের সচেতন মহল মনে করছে, ওয়াজ মাহফিলের মূল লক্ষ্য যদি আধ্যাত্মিক জাগরণ হয়, তবে সেটিকে উৎসব বা মেলার রূপ দেওয়া ধর্মীয় অনুভূতির অবমাননা। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসন ও আয়োজকদের সতর্ক নজর দেওয়া জরুরি, যাতে ভবিষ্যতে এমন আয়োজন তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারিয়ে না ফেলে।