সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
পীরগঞ্জের একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ফুলকুঁড়ি প্রি-ক্যাডেট কেজি স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান সম্প্রতি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত ও আইনগত উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ঘটনার সময় স্কুলের আশপাশের তিনটি পয়েন্টে শব্দ পরিমাপ করা হয়েছিল, যা স্পষ্টভাবে বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত শব্দ সীমা অতিক্রম করেছে।
নিরিবিলি ও আবাসিক এলাকার শব্দমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ (Environment Conservation Rules, 1997), যেখানে আবাসিক এলাকার অনুমোদিত শব্দ সীমা দিনে সর্বোচ্চ ৫৫ ডেসিবেল এবং রাতে সর্বোচ্চ ৪৫ ডেসিবেল ধরা হয়েছে। তবে ২০২৫ সালের ৫ নভেম্বর সকাল ১১:১৮ মিনিটে নেওয়া রেকর্ডিং অনুসারে, স্কুলের আশপাশের তিনটি স্থানে গড় শব্দ মাত্রা ছিল ৯১.৩ ডেসিবেল, যা অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৩৬.৩ ডেসিবেল বেশি। সর্বোচ্চ শব্দমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০২ ডেসিবেল, যা নিয়মিত সীমার চেয়ে ৪৭ ডেসিবেল বেশি।
এই মাত্রার শব্দ কেবল স্থানীয় বাসিন্দাদের নানারকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে না, বরং ছোট শিশুদের জন্যও ক্ষতিকর। উচ্চ শব্দে ঘুমহানি, মানসিক চাপ, শিশুদের মনোযোগে বিঘ্ন এবং শোনার সমস্যা হতে পারে। এছাড়া, আইনগত দিক থেকেও বিষয়টি গুরুতর। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫-এর ৬(গ) ধারা অনুযায়ী অনুমোদিত সীমার বাইরে শব্দ সৃষ্টিকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা, শাস্তি বা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ২৬৮ ও ২৯০ ধারায় শব্দদূষণকে “public nuisance” হিসেবে গণ্য করা হয়, যা দণ্ডনীয় অপরাধ।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, অনুষ্ঠান চলাকালীন তারা স্থায়ীভাবে উচ্চ শব্দে অস্বস্তিতে ছিলেন। বিশেষ করে স্কুলের নিকটবর্তী ৫০ গজের মধ্যে বসবাসকারী মানুষরা ক্ষুব্ধ। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার কথা বিবেচনা করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করার পাশাপাশি স্কুল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া উচিত।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র আইন প্রয়োগ নয়, বরং আবাসিক এলাকায় বাস্তুসংস্থান, শিশুদের সুস্থতা ও স্থানীয় মানুষের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করাও। স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভবিষ্যতে অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে স্থানীয় শব্দমান পর্যালোচনা করা, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইকের ব্যবহার সীমিত করা এবং প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
পীরগঞ্জের সচেতন নাগরিকদের অভিমত – পীরগঞ্জে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও বেশি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে এবং আইনগত জটিলতা সৃষ্টি হবে। তাই স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ সংরক্ষকরা যেন ত্বরিত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেন, তা সময়ের দাবি।