সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গন একসময় ছিল জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিকতার চর্চার স্থান। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির অঙ্গন সেই শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশ করেছে ভয়ানকভাবে। বিশেষ করে বিগত সরকার যখন স্কুল পর্যায়ে ছাত্রপরিষদ বা নির্বাচনের আয়োজন করে, তখনই শিক্ষার্থীদের রাজনীতিতে জড়ানোর এক নতুন দিগন্ত খুলে যায় — যা পরিণত হয় বিভাজন, হিংসা ও দলীয় আনুগত্যের প্রতিযোগিতায়।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার এ যাবৎ ঘটে যাওয়া বেশিরভাগ সংঘাতে স্কুলপড়ুয়ারাই জড়িয়ে ছিল। গতরাতে
একটি রাজনৈতিক দলের দফায় দফায়
সংঘর্ষ ‘স্কুল প্রাঙ্গণে রাজনীতি প্রবেশের প্রতিবর্তী ক্রিয়া বা রিফ্লেক্স অ্যাকশন বৈ কিছুই নয়।
বিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ ও নাগরিক চেতনা গঠনের প্রথম ধাপ। সেখানে রাজনৈতিক বিভাজন ঢুকে পড়লে শিক্ষা হারায় তার মূল লক্ষ্য মানুষ তৈরি করা। বরং ছোট বয়স থেকেই শিক্ষার্থীরা শেখে কে “আমাদের দল”, কে “ওদের দল”; বিরোধী মতকে সহ্য না করার সংস্কৃতি জন্ম নেয় অজান্তেই। ফলাফল—বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার জায়গায় দেখা যায় রক্তচক্ষু, দলবাজি আর শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কের অবনতি।
এই প্রক্রিয়ার ভয়াবহ দিক হলো বিদ্যালয়ে যে পরমতসহিষ্ণুতা ও সহনশীলতার পাঠ শেখানো উচিত, তা উল্টোভাবে বিকৃত হচ্ছে। শিশু-কিশোররা রাজনীতির নামে শিখছে ক্ষমতার কৌশল, দলীয় ভাষ্য আর প্রতিপক্ষ দমন। শিক্ষকদেরও অনেকে পড়ছেন চাপের মুখে কাকে সমর্থন করবেন, কাকে বিরোধিতা করবেন। ফলে শিক্ষার পরিবেশ হয়ে উঠছে ভয় ও বিভেদের কেন্দ্র।
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি থেকে সচেতনভাবে দূরে রাখা হয়, যাতে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে ও বিশ্লেষণী মস্তিষ্ক গড়ে তুলতে পারে। অথচ আমাদের দেশে সেই স্বাধীন চিন্তার জায়গাটিই সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।
এখন সময় এসেছে এই দুষ্টচক্র ভাঙার। স্কুলে রাজনৈতিক নির্বাচনের নামে বিভাজন সৃষ্টির এই সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষা হতে হবে মানবিকতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সামাজিক সহমর্মিতার পাঠশালা। শিশুরা যেন প্রথমে মানুষ হতে শেখে—দলীয় সৈনিক নয়।
শিক্ষাঙ্গন যদি আবারও মুক্ত চিন্তা, নৈতিকতা ও সহনশীলতার আলয় হয়ে উঠতে পারে, তবেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশ হবে আলোকিত ও ঐক্যবদ্ধ। অন্যথায়, স্কুল প্রাঙ্গণের রাজনীতি একদিন আমাদের জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক শিকড়কে ম্লান করে দেবে যার মূল্য দিতে হবে পুরো সমাজকেই।