সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাত্তোর সময়ে পরিবারতান্ত্রিক ধারা এক প্রভাবশালী বলয় তৈরি করেছে। এই বলয় ভেঙে গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নতুন রূপ দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মামুনুর রশিদ মামুন। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি রাজনৈতিক দর্শন, আন্দোলন-সংগ্রামের অভিজ্ঞতা ও নির্বাচনী অঙ্গীকার সম্পর্কে খোলামেলা বক্তব্য রাখেন।
মামুনুর রশিদ মামুনের রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এরপর সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ বছরে উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তিনি গণঅধিকার পরিষদের অন্যতম সংগঠক এবং ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তাঁর নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদ দেশের তরুণ সমাজকে নতুনভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে শুরু করে।
সাক্ষাৎকারে মামুন বলেন, “বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে দুটি পরিবার রাজনীতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। রাজনীতি এখন গণমানুষের হাতছাড়া হয়ে গেছে। গণঅধিকার পরিষদ রাজনীতিকে গণতান্ত্রিক রূপ দেবে। আমরা কোনো গৃহপালিত বিরোধী দল সৃষ্টি করব না, জনগণের আসল প্রতিনিধি হয়ে কাজ করব।” তিনি আরও জানান, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের নানা প্রলোভন থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই নির্বাচন বর্জন করে।
তরুণদের নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মামুন বলেন, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন তরুণদের রাজনীতি বিমুখ করে তুলেছে। তাই পরিচ্ছন্ন রাজনীতিতে তরুণদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি স্থানীয় মাদক চক্রকে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্মূল করেছেন এবং শিক্ষায় স্বচ্ছতা আনতে স্কুল কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছেন।
নির্বাচনী এলাকায় তাঁর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রসঙ্গে মামুনুর রশিদ মামুন সাক্ষাৎকারে জানান, ইতোমধ্যে ১০০ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন এবং ২৭টি রাস্তার কাজ শিডিউলভুক্ত হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কার, কঠোর মনিটরিং এবং শিক্ষকদের দায়সারা ভাব দূর করতে তিনি পদক্ষেপ নেবেন। কৃষিখাতে মজুদদারদের দৌরাত্ম্য রোধ করে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার অঙ্গীকারও করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের (পীরগঞ্জ ও রাণীশংকৈল) পশ্চাৎপদতার চিত্র তুলে ধরে মামুন বলেন, “দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এই আসন অনেক পিছিয়ে। আমি নির্বাচিত হলে তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করব, যাতে ৩০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।” তিনি স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ এবং উচ্চশিক্ষার জন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন।
ধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে ফুটে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে সব ধর্ম-বর্ণের মানুষ স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল। অথচ পরবর্তী সরকারগুলো হিন্দু সম্প্রদায়সহ সংখ্যালঘুদের ভোটের রাজনীতির তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখব। আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো পূজামণ্ডপে পুলিশ প্রোটেকশনের প্রয়োজন হবে না, মানুষের হৃদয়ের সম্প্রীতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।”
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, স্থানীয় ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ পানির উৎসকে শিল্পায়নের মাধ্যমে কাজে লাগানো হবে। এতে শুধু পানির সঠিক ব্যবহারই হবে না, বরং হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি হবে।
রাজনৈতিক সমালোচনা প্রসঙ্গে মামুন বলেন, “সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়ার কিছু নেই। সমালোচনা থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। আমি সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই।”
একজন তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক নেতার স্বপ্ন, সংগ্রাম ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের জনগণের আস্থা অর্জন করে তিনি যদি সংসদে প্রবেশ করলে এ অঞ্চলের পশ্চাৎপদতা দূর করার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টি করবেন—এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন স্থানীয়রা।