মোঃফেরদাউছ মিয়া,পলাশবাড়ী,গাইবান্ধাঃ
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED)-এর আওতাধীন একটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে ভয়াবহ অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলা ও গোপন চুক্তির মাধ্যমে ঠিকাদারকে সুবিধা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের তীর জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী, পলাশবাড়ীর সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী এবং উপ-সহকারী প্রকৌশলী হেলালুর রহমানের বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) স্থানীয় সাংবাদিক জাভেদ হোসেন এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করেন।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা যায়, পলাশবাড়ী উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হরিনাবাড়ী বাজার পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প (চেইনেজ ১৯৮০-২৬০০ মিটার এবং ২৮০০-৪০৫০ মিটার), যেখানে চারটি ইউ-ড্রেন ও দুটি আরসিসি বক্স কালভার্ট অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ১ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে এবং ২০২৫ সালের ২৬ মে চূড়ান্ত বিল পরিশোধ করা হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালে ওয়াটার বাইন্ডিং পর্যন্ত কাজ শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে প্রকল্পটি অবহেলায় পড়ে ছিল। হঠাৎ ২০২৫ সালের মে মাসে পুরনো WBM-এর ওপর সরাসরি বালু ফেলে কার্পেটিং শুরু হয়—যা প্রকৌশলগত প্রস্তুতি ছাড়াই সম্পন্ন করা হয়।
অভিযোগে বলা হয়, কাজ চলাকালীন একাধিকবার প্রকৌশলীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় এবং তৎকালীন রংপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা সহ সংশ্লিষ্টদের মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। তা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দ্রুত প্রকল্প শেষ করে বিল পরিশোধ করে দেওয়া হয়।
অভিযোগকারী জাভেদ হোসেন জানান, প্রকল্প যাচাইয়ের অনুরোধ জানাতে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করা হয় এবং বিল আটকে প্রকল্প মূল্যায়নের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে প্রকল্প সংক্রান্ত ফাইল দেখতে চাওয়া হলে, উপ-সহকারী প্রকৌশলী হেলাল তা দেখাতে ব্যর্থ হন। এক ঘণ্টা অনুসন্ধান করেও তিনি প্রকল্পের সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
প্রকল্পে ব্যবহৃত বালু, বিটুমিনসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর গুণগত মান ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। তবুও কোনো নিরপেক্ষ ল্যাব টেস্ট ছাড়াই বিল পরিশোধ করা হয়েছে—যা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। এ বিষয়ে অভিযোগে প্রকল্পের সব নির্মাণ উপকরণ পুনরায় ল্যাব টেস্ট করার দাবি জানানো হয়েছে।
অভিযোগকারী সাংবাদিক জাভেদ হোসেন বলেন, “জনগণের করের টাকায় এমন অনিয়ম ও দুর্নীতি মেনে নেওয়া যায় না। আমি চাই, একটি স্বাধীন প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকল্পের কাজ যাচাই করা হোক এবং দায়ী প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের অনিয়ম ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, সেজন্য স্থানীয় পর্যবেক্ষণ টিম গঠন করাও এখন সময়ের দাবি।”
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদের আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি মুঠোফোনে বলেন, “লিখিত অভিযোগ এখনো হাতে পাইনি, হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”