সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ,ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৯নং সেনগাঁও ইউনিয়নের ধতরা বিল বহু বছর ধরেই স্থানীয় কৃষি, জলসম্পদ এবং জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত। পীরগঞ্জ উপজেলার মৎস্য অফিস ও ভূমি অফিসের সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয় ধতরা বিল কেবল একটি মৌসুমি জলাশয় নয়, বরং একটি আঞ্চলিক ইকোসিস্টেম যা কৃষিজ উৎপাদন, মৎস্যসংস্থান এবং ভূ-পরিবেশগত স্থিতিশীলতার ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলছে।
ভূমি অফিসের খতিয়ান অনুযায়ী, ধতরা বিলের আকার মৌসুমি ওঠানামার মধ্যেও আনুমানিক ১৮০–২০০ একর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যার মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ এলাকা বর্ষা মৌসুমে পূর্ণ পানিতে পরিণত হয়। এই জলধারণ ক্ষমতা আশপাশের পাঁচটি মৌজা যথাক্রমে ধতরা, লস্করঘোপা, তালপুকুর, ভুঁইয়ারগাঁও ও খুটিয়াডাঙ্গীর কৃষিজমিকে সেচ-নির্ভরতা থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে মুক্তি দেয়। ভূমি বিভাগের হিসেবে প্রতি মৌসুমে ৩০০–৩৫০ হেক্টর জমিতে ধতরা বিলের পানির উপর নির্ভর করে বোরো ও আউশ চাষ হয়।
অন্যদিকে পীরগঞ্জ মৎস্য অফিসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিলটি স্থানীয় মৎস্য উৎপাদনের একটি সক্রিয় উৎস। প্রতিবছর প্রায় ২৫–৩০ মেট্রিক টন দেশি প্রজাতির মাছ ধরা হয়, যার মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কৈ, শিং ও মাগুর প্রধান। তবে মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছেন যে, পানির স্তর দ্রুত কমে আসা, অতিরিক্ত পলি জমা এবং অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার কারণে প্রাকৃতিক প্রজনন চক্র হুমকির মুখে পড়ছে। এ কারণে বিলটিকে “মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ জলাশয়” হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
পরিবেশগত গুরুত্বের দিক থেকেও ধতরা বিল বিশেষভাবে মূল্যবান। শীতকালে পরিযায়ী পাখি, বর্ষা মৌসুমে বিলটি হাঁস-মুরগি, পরিযায়ী পাখি, জলজ উদ্ভিদ, ব্যাঙ, শামুকসহ বিভিন্ন জীবের আবাসস্থল হয়ে ওঠে। সংরক্ষণ না হলে এই জীববৈচিত্র্য হারানোর ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানান পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি ও মৎস্য কর্মকর্তারা। তারা মনে করেন, ধতরা বিলের চারপাশে অনিয়ন্ত্রিত আবাদ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমানো না গেলে পরিবেশগত ক্ষতি দীর্ঘস্থায়ী হবে।