সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
৩ ডিসেম্বর,পীরগঞ্জবাসীর হৃদয়ে খোদাই হয়ে থাকা এক গর্বের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রক্তচক্ষুকে অতিক্রম করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে মুক্ত করেন পীরগঞ্জসহ সমগ্র ঠাকুরগাঁও। ইতিহাসের সেই উত্তাল ডিসেম্বর যেন আজও বাতাসে ভাসে , কখনও শোকের অনুরণন, কখনও স্বাধীনতার আলোড়ন, কখনও আবার হারানো মানুষের নিঃশব্দ আর্তনাদ।
সেদিনের পীরগঞ্জ ছিল পোড়ামাটি, তবুও মানুষের মন ভাঙেনি। মা-বোনেদের কান্না, শিশুদের ক্ষুধা, ঘরহারা মানুষের আর্তচিৎকারের মাঝেও একটা জেদ কাজ করছিল,“মুক্তি চাই, নিজের দেশ চাই।” সেই এক বিন্দু স্বপ্নই সাহস হয়ে ওঠে অস্ত্রহীন মানুষের হাতে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করছিলেন, আর পীরগঞ্জের সাধারণ মানুষ তাদের খাদ্য, আশ্রয়, চোখের পানি আর অটুট বিশ্বাস দিয়ে শক্তি জুগিয়েছিল। এ লড়াই শুধু গুলি-বোমার ছিল না; এ ছিল অস্তিত্ব, মর্যাদা আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জীবন বাজি রাখার যুদ্ধ।
অবশেষে ৩ ডিসেম্বরের ভোরে সেই কাঙ্ক্ষিত সূর্য উদিত হয়,পীরগঞ্জ হানাদারমুক্ত হয়। সেই মুহূর্ত ছিল একসাথে কান্না, উল্লাস, শোক আর গর্বের বিস্ফোরণ। ঘরে ঘরে ফিরেছিল বিজয়ের লাল-সবুজ পতাকা, কিন্তু তার ভাঁজে লেগে ছিল শহিদদের রক্তের গন্ধ।
এই দিনটিকে স্মরণে রাখতে, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও মর্যাদা তুলে ধরতে উপজেলা প্রশাসন এবং পীরগঞ্জ প্রেসক্লাব যৌথভাবে গ্রহণ করেছে বিশেষ কর্মসূচি। সকাল দশটায় উপজেলা পরিষদ থেকে বের হবে ‘মুক্তির শোভাযাত্রা’ যেন প্রতিটি পদক্ষেপে প্রতিধ্বনিত হবে সেই দিনের জয়ধ্বনি। এরপর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, শহিদদের প্রতি সম্মান, আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরতে আলোচনা সভা।