সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৭ নম্বর হাজীপুর ইউনিয়নে হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা ঘটেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত সংবাদে দীর্ঘদিন ধরে চলমান অনিয়ম ও নির্মাণগত ত্রুটির বিষয়ে আলোকপাত করার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরাসরি তদারকিতে নেমেছেন। এই পদক্ষেপ স্থানীয়দের মধ্যে স্বস্তি এবং আস্থা জাগিয়েছে, যা প্রমাণ করছে যে দায়বদ্ধ প্রশাসন ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা একসাথে কাজ করলে প্রকৃতপক্ষে পরিবর্তন সম্ভব।
সাম্প্রতিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কলেজের ছাদ ঢালাইয়ের কাজের আনুষ্ঠানিক শুভসূচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল রবিন, উপসহকারী প্রকৌশলী অলক রায়, ঠিকাদার মোবারক আলী, হাজীপুর কলেজের প্রভাষক জিল্লুর রহমান জুয়েল, সাংবাদিক সাকিব আহসান সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাদের সক্রিয় উপস্থিতি ও তদারকি নির্মাণকাজে একটি দৃঢ় শৃঙ্খলা এবং পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করেছে।
সংবাদ প্রকাশের পর উপসহকারী প্রকৌশলী অলক রায় সহকারী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল রবিনের সঙ্গে মিলে সরাসরি সাইটে এসে নির্মাণকাজের মান, নিয়মকানুন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাদের তদারকিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো ছাদ নির্মাণে বাঁশের খুঁটির পরিবর্তে মানসম্মত স্টিল প্রপস ব্যবহার শুরু করা। পাশাপাশি সাটারিং, বালু ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর মান যাচাই করা হচ্ছে এবং পূর্বের ত্রুটিগুলো দ্রুত সংশোধন করা হচ্ছে।
উপসহকারী প্রকৌশলী অলক রায়ের সক্রিয় তদারকি বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (BNBC) অনুযায়ী নির্মাণ প্রক্রিয়াকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করেছে। ফর্মওয়ার্ক, প্রপিং এবং কংক্রিটিংয়ের প্রতিটি ধাপ নিয়ম মাফিক সম্পন্ন হচ্ছে। তার উপস্থিতি শ্রমিক ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে কাজের গতি ও গুণগত মান দুটোই নজরদারির আওতায় এসেছে।
প্রকল্পের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে প্রজেক্ট প্রোফাইল সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয়, ঠিকাদার ও তদারকি কর্তৃপক্ষের তথ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে। এটি Public Procurement Rules (PPR) 2008 অনুযায়ী জবাবদিহি নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
স্থানীয় শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা এই পদক্ষেপকে সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয় মনে করছেন। তারা মনে করছেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন শুধুমাত্র ইট-পাথরের কাঠামো নয়; এটি শিক্ষার মান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার প্রতীক। প্রকৌশল মান বজায় রেখে কাজ সম্পন্ন হলে ভবনটি দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ, টেকসই এবং কার্যকর হবে।
সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, এই ঘটনা প্রমাণ করছে যে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা ও প্রশাসনিক সদিচ্ছা একত্রিত হলে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। উপসহকারী প্রকৌশলী অলক রায়ের সক্রিয় ভূমিকা ও পেশাদার তদারকি হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকে সঠিক পথে ফিরিয়ে এনেছে। এটি তার পেশাগত সততা ও দায়বদ্ধতার পরিচয় বহন করে।
এখন প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই নজরদারি অব্যাহত থাকবে এবং ভবনটি সম্পূর্ণভাবে প্রকৌশল মান ও সরকারি বিধিমালা মেনে শেষ হবে। কারণ নিরাপদ ভবন মানেই নিরাপদ শিক্ষা, এবং সেটিই হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় সাফল্য। স্থানীয়রা আশা করছেন, নির্মাণকাজের এই ধারা বজায় থাকলে ভবনটি শিক্ষার্থীদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে এবং শিক্ষার মানকে আরও উন্নত করবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.