সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ৭ নং হাজীপুর ইউনিয়নে হাজীপুর মহাবিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণকাজে প্রকাশ্য অনিয়ম যা সরেজমিনে পাওয়া বাস্তবতা। সরকারি টাকায় নির্মিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন, অথচ কাজ চলছে এমনভাবে যেন কোনো অনিয়ন্ত্রিত ব্যক্তিগত প্রকল্প। মাঠপর্যায়ের চিত্র যে শুধু অসংগতি নয়, বরং জনস্বার্থ ও সুরক্ষার জন্য সরাসরি হুমকি তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পর্যবেক্ষণে।
প্রথমত, সাইটে নেই প্রজেক্ট প্রোফাইল সাইনবোর্ড, যা বাংলাদেশের Public Procurement Act 2006 ও Public Procurement Rules (PPR) 2008–এর 36(3) ধারা অনুযায়ী বাধ্যতামূলক। সরকারি টাকায় নির্মাণকাজে প্রকল্পের নাম, ব্যয়, ঠিকাদার ও তদারকি কর্তৃপক্ষের পরিচয় প্রকাশ্য করার আইনি বিধান রয়েছে। সাইনবোর্ড না থাকা মানেই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মৌলিক ধাপটিই লঙ্ঘিত।
দ্বিতীয়ত, ভবনের ছাদ নির্মাণে লোহার খুঁটি (steel props) না ব্যবহার করে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হচ্ছে যা শুধুই নিম্নমানের নয়, বরং নিরাপত্তা মানদণ্ডের পরিপূর্ণ ব্যত্যয়। বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড (BNBC) অনুযায়ী যে কোনো বহুতল ভবনের ফর্মওয়ার্ক ও প্রপিং-এ নির্ধারিত শক্তিমানের স্টিল সাপোর্ট বাধ্যতামূলক। কাঠের সাটারের পরিবর্তে সারা ভবনে মিশ্র কাঠের সাটার ব্যবহারের ঘটনাও একই শ্রেণির অনিয়ম যা ভবনের লোড-বিয়ারিং ক্ষমতা, ছাদের সমতা এবং দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলে।
এই সব প্রশ্ন ম্যানেজার মোবারক আলীর কাছে তুললে তিনি নির্বিকার ভঙ্গিতে বলেন, “এসব ব্যবহার করা যাবে।” তার এই মন্তব্য কেবল অজ্ঞতাই নয়,আইন, প্রকৌশল মানদণ্ড ও সরকারি নির্দেশনার বিরুদ্ধে এক ধরনের অস্বীকার-সংস্কৃতি প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জেসমিন আকতার বলেন, “আপনি এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।” একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তির এমন দূরত্ব বজায় রাখা বোঝায়—নির্মাণকাজের ওপর প্রশাসনিক তদারকি প্রায় শূন্য। অথচ PPR 2008-এর 29(1) ধারা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষের সক্রিয় নজরদারি বাধ্যতামূলক।
যাচ্ছেতাইভাবে নির্মাণকাজের এই ধরণ শুধু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎকেই ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতিকে আরও প্রাতিষ্ঠানিক করে তুলছে। ভবনটি একদিন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও স্থানীয়দের প্রাণঘাতী ঝুঁকিতে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়।
স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (EED) ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। কারণ, যে ভবনে আগামী প্রজন্ম শিক্ষা নেবে, সেই ভবনের বুনিয়াদই যদি দুর্বল হয় তাহলে ঝুঁকির দায় কার?
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.