সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
পীরগঞ্জের টিএনটি মোড়ে শীতের রাতের নরম আলোয় যখন কয়েকজন মানুষ ব্যানার হাতে দাঁড়ালেন, তখন বুঝে নেওয়া কঠিন ছিল না,এটি শুধু একটি কর্মসূচি নয়, বরং দীর্ঘদিনের দুঃখ-অসন্তোষের বিস্ফোরণ। ব্যানারে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা,“কৃষক বাঁচান, দেশ বাঁচান।” পরিচিত এই স্লোগান আজ আরও ভারী, আরও তীক্ষ্ণ, কারণ এর পেছনে রয়েছে কৃষকের বেঁচে থাকার সংগ্রাম।
মানববন্ধনের ব্যানারে সরাসরি অভিযোগ ছিল একই পরিবারের একাধিক সদস্য বিএসআইসি সার ডিলারশিপ নিয়ন্ত্রণ করে কৃত্রিম সার সংকট সৃষ্টি করেছে। কৃষকের মৌসুমী চাহিদাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে যদি বাজার সংকট তৈরি হয়, তবে সেটা শুধু আর্থিক নয়; এটা অস্তিত্বের সমস্যা। সারের জন্য দিনের পর দিন দৌড়াদৌড়ি, অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হওয়া, চাষাবাদ ব্যাহত হওয়া এসব মিলেই কৃষকের ক্ষোভ আজ তীব্র আকারে প্রকাশ পাচ্ছে।
ব্যানার ধরে দাড়িয়ে থাকা মানুষগুলো কোনো সংগঠনের পেইড কর্মী নন,তাঁরা স্থানীয় কৃষক, দিনমজুর, বাজারের পরিচিত মুখ। তাদের পরনের পোশাকে গ্রামবাংলার প্রতিচ্ছবি, আর মুখের অভিব্যক্তিতে জমে থাকা ক্লান্তি ও ক্ষোভ। এই দৃশ্য বলে দেয়,এ সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক নয়; এটি মানুষের হৃদয়ের ক্ষতের প্রতিচ্ছবি।
সার সংকট কৃষকের জন্য সবচেয়ে বড় ধাক্কা। কারণ, চাষাবাদের সময়ের সঙ্গে যুদ্ধ চলে।একদিন দেরি মানে উৎপাদন কমে যাওয়া, বেশি খরচ, ঋণের বোঝা, পরিবারের অভাব। আর সংকট যদি “স্বাভাবিক” না হয়ে “সৃষ্ট” হয়, তবে কৃষকের ক্ষোভ ন্যায়সঙ্গতভাবেই বিস্ফোরিত হয়।
মানববন্ধনের আয়োজক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে “এলাকাবাসী” যা এ প্রতিবাদকে রাজনৈতিক রং থেকে দূরে সরিয়ে এনে সরল মানুষের সরল দাবির জায়গায় দাঁড় করায়। তাদের বার্তা পরিষ্কার: সার বিতরণে ন্যায় চাই, স্বচ্ছতা চাই, কৃষকের জীবন নিয়ে কারসাজি বন্ধ চাই।
পীরগঞ্জের এই মানববন্ধন শুধু একটি ছোট অনুষ্ঠান নয়; এটি বড় সংকেত হল গ্রামীণ অর্থনীতিতে যদি বিতরণব্যবস্থার ওপর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ গড়ে ওঠে, যদি কৃত্রিম সংকটকে অস্ত্র বানানো হয়, তবে জনগণ আর নীরব থাকবে না। কৃষক যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো সমাজ, পুরো বাজার, পুরো দেশ।