মোঃফেরদাউছ মিয়া,পলাশবাড়ীঃ
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনে তথ্য গোপন ও জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাতের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন পলাশবাড়ী পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ী গ্রামের মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে নুরে আলম সিদ্দিক। এ অভিযোগ তুলেছেন তার মামাতো বোন, বাড়াই গ্রামের মোস্তাফিজারের কন্যা মরিয়ম বেগম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পলাশবাড়ী পৌর শহরের নুনিয়াগাড়ী মৌজায় অবস্থিত ১৬ শতাংশ পৈত্রিক জমির বৈধ অংশীদার মরিয়ম বেগমের মা ও খালা। দীর্ঘদিন ধরে ওই জমি নুরে আলম সিদ্দিক জোরপূর্বক দখলে রেখে আসছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মহাসড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্পের জন্য জমিটির একটি অংশ সরকার অধিগ্রহণ করে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলনের সময় নুরে আলম সিদ্দিক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে সম্পূর্ণ অর্থ একাই আত্মসাতের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ অধিগ্রহণ নোটিশের ৪, ৭ ও ৮ ধারায় মরিয়ম বেগমের মা-খালাসহ অন্যান্য ওয়ারিশদের নাম ও মালিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে পাঠানো ল্যান্ড অফিসার (এলও) সরেজমিনে তদন্ত করতে গেলে ঘটনাস্থলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তদন্ত কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজার রহমানের উপস্থিতিতেই দুই পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ সময় মরিয়ম বেগম ও তার স্বজনরা অভিযোগ করেন, নুরে আলম সিদ্দিক তদন্ত কর্মকর্তাকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।
ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান, “মোট ১৬ শতাংশ জমির মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ভাইয়ের প্রাপ্য হলেও অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ চার বোনের আইনগত অংশ। তা সত্ত্বেও নুরে আলম ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে অধিগ্রহণকৃত জমির সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণের টাকা একাই হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন এবং অবশিষ্ট জমিও দখলে রাখার পাঁয়তারা করছেন। আমরা আমাদের ন্যায্য হিস্যা চাই।”
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নুরে আলম সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, গ্রামে তার অন্য জমি রয়েছে এবং সেখান থেকে অংশীদারদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন। তবে অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণের টাকা এককভাবে উত্তোলনের বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
ভুক্তভোগী পরিবারটি ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। বিষয়টি বর্তমানে জেলা প্রশাসন ও ল্যান্ড অফিসের তদন্তাধীন রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, সঠিক তদন্ত ও প্রকৃত ওয়ারিশ শনাক্ত না হলে সরকারি অর্থের অপব্যবহারের সম্ভাবনা রয়েছে।
এলাকাবাসীর দাবি, সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ওয়ারিশদের যাচাই–বাছাই করে আইন অনুযায়ী ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা হোক। একই সঙ্গে তথ্য গোপন, জালিয়াতি কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যেন কেউ ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে, সে বিষয়ে জেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.