সম্পাদকীয়ঃ
ময়মনসিংহে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে ১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে দিপু চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা এবং পরবর্তীতে মৃতদেহে আগুন দেওয়ার চেষ্টার ঘটনা আমাদের সমাজকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়; এটি মানবতা, আইনের শাসন ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে এক ভয়ংকর আঘাত।
কোনো অভিযোগ থাকলেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। সভ্য রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো আইন, বিচার ও ন্যায়বিচার। সেখানে জনতার হাতে বিচার, পিটিয়ে হত্যা কিংবা মৃতদেহের অবমাননার কোনো স্থান নেই। এ ধরনের ঘটনা মানবাধিকারের সবচেয়ে মৌলিক অধিকার জীবনের অধিকার কে অস্বীকার করে এবং সমাজে ভয়, অস্থিরতা ও প্রতিশোধের সংস্কৃতি উসকে দেয়।
ইসলামের দৃষ্টিতেও এ ধরনের সহিংসতা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য। ইসলাম কখনোই অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা সমর্থন করে না। বরং একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সমগ্র মানবজাতিকে হত্যার সমতুল্য এই কঠোর বার্তাই ইসলামের মূল শিক্ষা। ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ থাকলেও তার বিচার করার একমাত্র বৈধ পথ হলো রাষ্ট্রীয় আইন ও আদালত। নিজ হাতে শাস্তি দেওয়ার কোনো অনুমতি ইসলাম দেয় না। এমনকি মৃত্যুর পরও মানুষের মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে; মৃতদেহের অবমাননা সেখানে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
অতএব, ধর্মের নামে সংঘটিত এ ধরনের নৃশংসতা আদতে ধর্মীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ নয়; বরং তা ধর্মের অপব্যবহার। এটি ধর্মীয় সহনশীলতা, শান্তি ও ন্যায়বিচারের বিপরীত চিত্র তুলে ধরে।
আমরা মনে করি, এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। একই সঙ্গে সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে, ধর্মীয় অনুভূতির অজুহাতে সহিংসতা নয়, বরং আইন মেনে ন্যায়বিচারই একমাত্র পথ। নইলে এমন নেক্কারজনক ঘটনা বারবার আমাদের মানবিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.