আব্দুল্লাহিল শাহীন,তারাগঞ্জ, রংপুরঃ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর খিয়ারপাড়া গ্রামে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় (৭৫) এবং তাঁর স্ত্রী সুর্বণা রায় (৬০)-কে গলা কেটে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোক ও আতঙ্কের ছায়া। শনিবার দিবাগত রাতে তাদের নিজ বাড়িতেই এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে।
রোববার ভোরে প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করেও সাড়া না পাওয়ায় দীপক নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বাড়ির মেইন গেটে মই লাগিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি রান্নাঘরে সুর্বণা রায় এবং ডাইনিং রুমে যোগেশ চন্দ্র রায়কে রক্তাক্ত ও গলা কাটা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর ছড়িয়ে পড়তেই আশপাশের মানুষ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
খবর পেয়ে তারাগঞ্জ পুলিশ, রংপুর পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইন, অতিরিক্ত ডিআইজি ড. আক্তারুজ্জামান বসুনিয়া, র্যাব, সিআইডি, পিবিআইসহ, বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন। তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনাব্বর হোসেনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সুরতহাল করে তাদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, হত্যার মোটিভ উদঘাটনে নিহতের পরিবার, প্রতিবেশী এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, যোগেশ চন্দ্র রায় ছিলেন অত্যন্ত সৎ, শান্ত স্বভাবের ও মানবিক একজন মানুষ। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সমাজে তাঁর ছিল ব্যাপক সম্মান। এমন একজন মানুষের ওপর রাতের অন্ধকারে এ ধরনের হামলা গ্রামবাসী মেনে নিতে পারছেন না।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, দুর্বৃত্তরা রাতের কোনো এক সময় বাড়ির প্রাচীর টপকিয়ে ভিতরে ঢুকে ঘরের যোগেশ চন্দ্র রায়কে এবং এবং তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তাঁরা প্রকৃত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক ডা. আলী হাসান, তারাগঞ্জ–বদরগঞ্জ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার, এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির ও একই আসনের সংসদ পদপ্রার্থী এ টি এম আজহারুল ইসলাম ও তারাগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার লোক।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্ত্রীয় কমিটির নায়েবে আমির এ টি এম আজহারুল ইসলাম বলেন-এটি একটি নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। দ্রুত প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তবে তদন্তের নামে কোনো নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি নিহত পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেন এবং জয়পুরহাট র্যাব–৫ এ কর্মরত নিহত দম্পতির ছেলে সুবেন্দ্র রায়কে ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানান।
হত্যাকান্ডের শিকার যোগেশ চন্দ্র রায় রহিমাপুর নয়াহাট মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। স্বামী–স্ত্রী দুজনই বাড়িতে একসঙ্গে বসবাস করতেন। তাঁদের দুই ছেলে রাজেশ রায় ঢাকা পুলিশের (এসবি)-তে এবং সুবেন্দ্র রায় র্যাব–৫ জয়পুরহাটে এ কর্মরত আছেন।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকায় শোক, ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি হত্যার পিছনে কি রহস্য এখনো নিশ্চিত নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন তারা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.