খবরবাড়ি ডেস্কঃ
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন খাতে পরিবর্তনের হাওয়া বইলেও গাইবান্ধার স্বাস্থ্যখাতে এখনো বহাল রয়েছে আওয়ামী আমলের প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট। জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে ক্ষোভে ফুঁসছেন সাধারণ ঠিকাদার ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা।
এই সিন্ডিকেটের নেপথ্যে মূল হোতা হিসেবে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) জেলা নেতা ও সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. শাহিনুল ইসলামের নাম উঠে এসেছে।
২৮ ডিসেম্বর রবিবার দুপুর ১২টায় পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে ‘সচেতন নাগরিক সমাজ ও আন্দোলনরত ঠিকাদারবৃন্দ’-এর পক্ষ থেকে সোলায়মান খন্দকার এসব অভিযোগ লিখিত আকারে প্রকাশ্যে আনেন।
পরিবারতন্ত্র ও দলীয় আধিপত্যের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করা লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পলাশবাড়ীসহ গাইবান্ধা জেলার প্রায় সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আওয়ামী আমলের আলোচিত ও কথিত ‘কালো তালিকাভুক্ত’ প্রতিষ্ঠান মেসার্স মাজেদ ট্রেডার্স, মেসার্স স্বর্ণা এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স লিমন কনস্ট্রাকশন এবং মেসার্স আমেনা ট্রেডার্স এখনো সিন্ডিকেট বজায় রেখে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ডা. শাহিনুল ইসলাম তার আপন বড় ভাই ও পলাশবাড়ী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মাজেদুর রহমানের মালিকানাধীন ‘মাজেদ ট্রেডার্স’-কে নিয়মবহির্ভূত ভাবে কাজ পাইয়ে দিতে সরাসরি প্রভাব খাটান। বিগত ১৫ বছরে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি বিপুল অঙ্কের কমিশন বাণিজ্য করেছেন বলেও দাবি করা হয়।
সাজানো শর্তে বঞ্চিত নতুন ঠিকাদার সম্প্রতি পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আহ্বান করা একটি দরপত্র ঘিরে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনরত ঠিকাদারদের অভিযোগ, দরপত্রে এমন কিছু অযৌক্তিক ও কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে, যা কেবল ওই নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষেই পূরণ করা সম্ভব।
ফলে নতুন, যোগ্য ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ঠিকাদাররা কার্যত প্রতিযোগিতার বাইরে চলে যাচ্ছেন। তাদের ভাষ্য, ফ্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগী ঠিকাদারদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যেই কর্মকর্তাদের যোগসাজশে এই ‘সাজানো টেন্ডার নাটক’ চলছে।
সচেতন নাগরিকদের কঠোর দাবি
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,
“দেশ যখন বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে, তখন স্বাস্থ্যখাতে এই মাফিয়াতন্ত্র কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
তারা অবিলম্বে বিতর্কিত দরপত্র বাতিল করে স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের দাবি জানান। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে গাইবান্ধার স্বাস্থ্যখাতে সংঘটিত সব অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত করে ডা. শাহিনুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তারা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.