সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি-বহির্ভূত ৫৭টি আদেশে ডিপিসি স্থবির—১২ বছরেও প্রথম পদোন্নতি পাচ্ছেন না বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকরা। একারণে
পীরগঞ্জ সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার পরিষদ সরকারি কলেজ গেইটে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন।
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের প্রভাষক পর্যায় আজ এমন এক অচলাবস্থায় দাঁড়িয়ে যেখানে পাঁচ বছরের স্বাভাবিক পদোন্নতি ১২ বছরে গিয়েও মিলছে না। অভিযোগ শুধু প্রশাসনিক জট নয়; মূল সংকট সৃষ্টি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা বিধি-বহির্ভূত ৫৭টি আদেশ, যা নিয়মিত বিসিএস কর্মকর্তা নিয়োগপ্রাপ্ত প্রভাষকদের সিনিয়রিটির তালিকা অকারণে উল্টে দিয়েছে। এর ফলে সারা দেশের সরকারি কলেজগুলোতে প্রায় ২৩০০ সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা বছরের পর বছর সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত।
বঞ্চনার পরিসংখ্যানই বল এই ক্যাডারে পদোন্নতি এখন সোনার হরিণ।
৩২তম থেকে ৩৭তম বিসিএস ব্যাচ পর্যন্ত মোট পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন ২,৩৯৯ জন। এর মধ্যে ৩২তম ব্যাচের ৫৪ জন,৩৩তম ব্যাচের ৩৬১ জন,৩৪তম ব্যাচের ৬৩১ জন,৩৫তম ব্যাচের ৭৪০ জন,৩৬তম ব্যাচের ৪৬০ জন এবং ৩৭তম ব্যাচের ১৫৩ জন।
প্রশ্নবিদ্ধ ৫৭টি আদেশের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০০০ সালের বাতিলকৃত বিধির ৬(৫) ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে আত্মীকৃত শিক্ষকদের একই তারিখে ক্যাডারভুক্ত দেখিয়ে সিনিয়রিটির কৃত্রিম সুবিধা দিয়েছে। অথচ ২০১৮ সালের বিধি দ্বারা ২০০০ বিধি সম্পূর্ণ বাতিল।কোন আদেশ জারির আগেই আইন মন্ত্রণালয় বা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
সচিবালয় নির্দেশমালারও স্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।
ফলে নিয়মিত বিসিএস প্রভাষকরা যেখানে ৭–১২ বছর কর্মরত থেকেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না, সেখানে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত প্রায় ২৩০০ আত্মীকৃত শিক্ষক অগ্রাধিকার সুবিধা পাচ্ছেন সম্পূর্ণ বিধি-বহির্ভূতভাবে।
ডিপিসি বৈঠক হলেও পদোন্নতি জিও অমীমাংসিত।
২০২৫ সালের ৪ জুন অনুষ্ঠিত ডিপিসি (Departmental Promotion Committee) বৈঠকে প্রভাষকের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
তবু জারি হয়নি পদোন্নতির জিও।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে “আত্মীকৃত শিক্ষকদের মামলা” থাকায় তারা জিও দিতে পারছে না, অথচ আদালতের কোনো পর্যবেক্ষণেই পদোন্নতি স্থগিত রাখার নির্দেশ নেই।
আত্মীকৃত শিক্ষকদের মেরিট মামলায় উচ্চ আদালত ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিধি-বহির্ভূত ৫৭টি আদেশের ওপর, ডিপিসির ওপর নয়।
অর্থাৎ আদালতীয় বাধা নেই; বাধা প্রশাসনিক।
অন্য ক্যাডার এগিয়ে, শিক্ষা ক্যাডারের থেমে থাকা চরম বৈষম্যের প্রতিচ্ছবি।
এই সময়ের মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার একাধিক দফায় পদোন্নতি
বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার সুপারনিউমারারি পদোন্নতি (৫০০+ কর্মকর্তা)
সারা দেশে “No Promotion, No Work” শুরু
বহু বছরের ন্যায়বিচারহীনতা, বিধি-বহির্ভূত সিনিয়রিটি প্রদান, ডিপিসি জিও আটকে রাখা এবং মন্ত্রণালয়ের নীরব ভূমিকার প্রতিবাদে আজ থেকে সারা দেশের সরকারি কলেজে শুরু হলো আন্দোলন—“No Promotion, No Work”।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাডার হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকরা আজ সবচেয়ে বৈষম্যের শিকার। প্রশাসনিক সদিচ্ছা থাকলে ১৬ নভেম্বরের মধ্যেই পদোন্নতির জিও জারি করা যেত—কারণ এতে সরকারের বাড়তি ব্যয় নেই।
এখন সরকারের সামনে দুটি পথ—
১) বিধি-বহির্ভূত আদেশ বাতিল করে নিয়মিত বিসিএস প্রভাষকদের ন্যায্য পদোন্নতি প্রদান
২) অথবা শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই ক্যাডারকে আরও গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দেওয়া।