সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৯ নং সেনগাঁও ইউনিয়নের আগ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় পীরগঞ্জ পৌরশহর ঘেষা (আউটস্কার্ট) ৮ নং দৌলতপুর ইউনিয়নের ঘেষা ব্র্যাক অফিস এলাকার বাসিন্দা ছন্দু মিয়াকে ঘিরে উদ্ভূত সাম্প্রতিক ঘটনাটি স্থানীয় সমাজে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ,প্রতিআরোপ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, এবং পারিবারিক সংকটের মিশ্রণে এই ঘটনাটি এখন এক রহস্যময় চক্রব্যূহে পরিণত হয়েছে, যা তদন্তকারীদের জন্য ভেদ করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ছন্দু মিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন যে, আগ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় তাঁর দাম্পত্য জীবনে হস্তক্ষেপ করছেন। ছন্দুর দাবি, স্বপন কুমার তাঁর স্ত্রীকে ভুল তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করেছেন। তিনি তাঁর স্ত্রীর ‘কান ভারী’ করে বলেছেন,”ছন্দু নাকি অন্য এক নারীর সঙ্গে বিবাহিত বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত।” এই বক্তব্যে প্রভাবিত হয়ে ছন্দুর স্ত্রী ক্রমেই সন্দেহপ্রবণ হয়ে ওঠেন, এবং সংসারে সৃষ্টি হয় অবিশ্বাস ও বিশৃঙ্খলার পরিবেশ।
ছন্দু মিয়া অভিযোগ করেন, স্বপন কুমার ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁর পারিবারিক স্থিতি ভাঙার চেষ্টা করেছেন, যা শুধু তাঁর ব্যক্তিজীবন নয়, সামাজিক মর্যাদাকেও ক্ষুণ্ণ করেছে। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী এখন আমাকে সন্দেহের চোখে দেখেন। সংসারে শান্তি নেই।
অন্যদিকে, প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “ছন্দু মিয়া ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়িয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।” তিনি দাবি করেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও তাঁর সামাজিক ও পেশাগত সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা।
আইনগতভাবে এই ঘটনায় বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা (ভয়ভীতি বা হুমকি প্রদান), ৫০০ ধারা (মানহানি) এবং ৫০৯ ধারা (নারীর মর্যাদা বা পারিবারিক গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ) প্রযোজ্য হতে পারে। যদি প্রমাণিত হয় যে একজন সরকারি কর্মকর্তা (শিক্ষক) উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অন্যের পারিবারিক জীবনে হস্তক্ষেপ করেছেন, তবে এটি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গেরও শামিল হবে।
তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, ঘটনাটির দুই পক্ষই নিজেদের ভুক্তভোগী দাবি করছেন। একদিকে ছন্দুর অভিযোগে উঠে এসেছে পারিবারিক ক্ষয়ক্ষতির কথা, অন্যদিকে স্বপন কুমার বলছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটানো হচ্ছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, বিষয়টি এখন পারিবারিক গণ্ডি ছাড়িয়ে সামাজিক আলোচনার পর্যায়ে চলে গেছে।
আগ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় ও দৌলতপুরের ছন্দু মিয়াকে ঘিরে যে বিরোধের সূত্রপাত হয়েছে, তা এখন সামাজিক মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মান ও দাম্পত্য সম্পর্কের জটিল এক ত্রিভুজে পরিণত হয়েছে। ছন্দুর ভাঙনের পথে এগোতে থাকা সংসার এবং স্বপনের পেশাগত সুনামের প্রশ্ন দুটিই এখন তদন্তের ভারে ঝুলে আছে। প্রশাসনের জন্য এই রহস্যের চক্রব্যূহ ভেদ করা শুধু দায়িত্ব নয়, এক কঠিন পরীক্ষাও।