মোঃফেরদাউছ মিয়া,পলাশবাড়ী,গাইবান্ধাঃ
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ৪ নং বরিশাল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পল্লী দুবলাগাড়ী। গ্রামের মানুষ সহজ-সরল, প্রকৃতি মনোরম। সেই পরিবেশেই দাঁড়িয়ে আছে দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়—একটি আদর্শ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার দায়বদ্ধতা, নান্দনিকতা ও সৃজনশীলতার গল্প এখন এলাকায় অনুকরণীয় উদাহরণ।
তবে সব অর্জনের মাঝেও বড় একটি সংকট আজ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে—বিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নেই, আর এ কারণে ব্যাহত হচ্ছে নিয়মিত পাঠদান।
শহরের নামকরা বিদ্যালয়ের সঙ্গে টেক্কা দেওয়ার মতো দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ। বিদ্যালয়জুড়ে সবুজের সমারোহ, ছাদবাগানে বাহারি ফুল–ফল, খোলা বাতাসে মন ভরিয়ে শেখার সুযোগ।
এখানে রয়েছে সততা স্টোর—যেখানে নেই কোনো বিক্রেতা, আছে শুধু আত্মবিশ্বাস আর নৈতিকতার শিক্ষা। আছে পত্রিকা পাঠাগার, যেখানে প্রতিদিন শিশুরা দেশ–বিদেশের খবর পড়ে নিজেদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করে।
শিশুদের প্রতিদিনের ভালো কাজগুলো তুলে ধরা হয় নৈতিক দেয়ালে—যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে।
২০১৬ সালের ২৮ জুলাই যোগদানের পর থেকে প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী সেলিম শিক্ষার পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা ও শিক্ষার্থীবান্ধব নানা উদ্যোগের মাধ্যমে বিদ্যালয়টিকে আদর্শ প্রতিষ্ঠানের রূপ দিয়েছেন।
২০২৫ শিক্ষা বর্ষে বিদ্যালয়ে ১ম থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫৮; উপস্থিতি ৯০ শতাংশেরও বেশি—যা স্কুলটির প্রতি শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ ও বিশ্বাসের প্রমাণ।
শিক্ষা পরিবেশ যতই সুন্দর হোক, শ্রেণিকক্ষের ঘাটতি আজ বড় দুর্ভাবনার কারণ।
জরাজীর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে চলছে ক্লাস। শিক্ষকরা আন্তরিক, শিক্ষার্থীরা আগ্রহী—তবুও ভবন সংকট প্রতিনিয়ত বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানী সেলিম বলেন—
“নৈশপ্রহরী ও ঝাড়ুদার পদের কর্মচারী না থাকায় প্রতিদিনই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তার ওপর পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় পাঠদান ব্যাহত হয়। শিক্ষার মান ধরে রাখতে আমরা প্রাণান্ত চেষ্টা করছি, কিন্তু ভবন সংকট বড় বাধা।”
স্থানীয় অভিভাবকরা জানালেন,
“বিদ্যালয়ের মান অত্যন্ত ভালো। সেলিম স্যার যোগদানের পর স্কুলটির চেহারা বদলে গেছে। কিন্তু ভবন না থাকায় নিয়মিত পাঠদান বিঘ্নিত হচ্ছে। হাজারো সম্ভাবনা থাকা এই বিদ্যালয়টির জন্য একটি নতুন ভবন এখন সময়ের দাবি।”
পলাশবাড়ীসহ জেলায় অনেক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে, কোথাও কাজ চলছে, কোথাও শুরু অপেক্ষায়। কিন্তু দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এখনো সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
এমন অবস্থায় অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
দুবলাগাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শুধু একটি বিদ্যালয় নয়—এটি গ্রামের শিশুদের স্বপ্নের পথচারী। সৃজনশীলতা, নৈতিকতা, শৃঙ্খলা ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষার যে অনন্য উদাহরণ এখানে তৈরি হয়েছে, তা অটুট রাখতে প্রয়োজন একটি স্থায়ী ও উপযুক্ত বিদ্যালয় ভবন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত উদ্যোগই পারে এই শিশুদের স্বপ্নকে বাস্তবের আলো দেখাতে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.