সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
পীরগঞ্জের সাম্প্রতিক ঘটনাপুঞ্জ যেন এক অদৃশ্য ঘূর্ণাবর্ত যেখানে কেন্দ্রবিন্দুতে একজন নারী, পাঁচজন পুরুষের একই দাবি, এবং পরিণতিতে এক সরকারি প্রধান শিক্ষকের জীবনে নেমে এসেছে অস্থিরতার ঝড়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পরিবার, আইন সবকিছু ছাপিয়ে স্থানীয় জনমনে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তুলেছে প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায়ের বর্তমান বিপর্যস্ত অবস্থা।
নথিগুলো এক অস্বাভাবিক চিত্র এঁকে দেয়। সম্পা সরকার নামের এই নারী কখনো পঞ্চগড় জেলার বোদা থানার দীনবন্ধু রায়ের স্ত্রী, কখনো নীলফামারী সদর থানার বীরেন্দ্রনাথের স্ত্রী, আবার কখনো সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর থানার শ্যামল কুমারের স্ত্রী হিসেবে পরিচিত যার সাথে সিরাজগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং স্বমী স্ত্রীর মারামারির মামলা চলমান। এর পরে সম্পা সরকার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন পীরগঞ্জ উপজেলার ৯ নং সেনগাঁও ইউনিয়নের স্বপন কুমার রায় নামের এক প্রধান শিক্ষকের সাথে। পরবর্তীতে সম্পা সরকার বিবাহ করেন ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ৩নং খনগাঁও ইউনিয়নের রামকৃষ্ণ রায়েকে।
রামকৃষ্ণ রায় ভগতগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক।
রামকৃষ্ণ রায় ও সম্পা সরকার তাদের নবদাম্পত্য জীবন উপভোগ করছেন পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নে প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায়ের পৌরশহরস্থ ১ নং ওয়ার্ডের জমিতে নির্মিত বাড়িতে । স্বপন কুমার রায়কে ঠকিয়ে দেদারসে নবদাম্পত্য জীবনের স্বাদ নিচ্ছেন শিক্ষক রামকৃষ্ণ রায় ও সম্পা সরকার।
এই বহুস্তরীয় পরিচয় কেবল বিভ্রান্তিকর নয়; বরং প্রতিটি পরিচয়ের পেছনে সময়কাল, আইনি অবস্থান ও সামাজিক প্রভাব নিয়ে ছড়িয়ে আছে বিরাট ধোঁয়াশা।
স্বপন কুমার রায় বিবাহ বাতিলের একটি মামলা করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের জজ কোর্টে, যা এখন বিচারাধীন। এখান থেকেই ঘটনার মোড় নাটকীয়ভাবে ঘুরে যায়।
ঘটনার নেপথ্যে আরও ঘনীভূত একটি ছায়াপথ রয়েছে যেখানে রয়েছেন ভগতগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক রামকৃষ্ণ রায়ের। স্থানীয়দের ভাষ্য, সম্পা সরকারের সঙ্গে রামকৃষ্ণ রায়ের ঘনিষ্ঠতা দীর্ঘদিনের, এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থাতেই নতুন বিবাহ সম্পন্ন হয়। এখন তাঁরা আর দশজন সাধারণ দম্পতির মত বৈবাহিক জীবনযাপন করছেন এবং সামাজিকভাবে সেই অবস্থানেই বসবাস করছেন।
এখানেই প্রশ্নের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়—এই সম্পর্ক কি নিছক ব্যক্তিগত ছিল, নাকি এর ভেতরে ছিল লক্ষ্যভিত্তিক কোনো কৌশল? সূত্রমতে, রামকৃষ্ণরায় সম্পাকে সামনে রেখে স্বপন কুমারকে বিভিন্নভাবে চাপের মুখে ফেলা, তাঁর সামাজিক অবস্থানকে দুর্বল করা এবং ব্যক্তিজীবনে অস্থিরতা সৃষ্টি করার মতো ঘটনাগুলো পরিকল্পিতভাবেই ঘটিয়েছে। একাধিক বিবাহের জটিলতা এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয়ের ব্যবহার, সবকিছু যোগ করলে নেপথ্যে রামকৃষ্ণ রায়ের সক্রিয় ভূমিকার অভিযোগ আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্বপন কুমার রায়। তিনি নিজেকে একটি কৌশলগত হানি ট্র্যাপের শিকার । তাঁর পেশাগত মর্যাদা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা, সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা সবই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়েও তিনি আজ আইনি লড়াই, সামাজিক তির্যক দৃষ্টি আর নৈতিক বিভ্রান্তির কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে একাকী লড়ছেন।
এই পুরো গল্প শুধু ব্যক্তি সম্পর্ক বা গৃহস্থালির ঝামেলা নয় এটি নৈতিকতা, আইনের কার্যকারিতা এবং সামাজিক বিশ্বাসের ওপর সরাসরি আঘাত। একদিকে স্বপন কুমার বিধ্বস্ত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে পীরগঞ্জ থানা সাধারণ ডায়েরি ( জিডি- ৭৫৪)করেন। অন্যদিকে রামকৃষ্ণ রায় নববিবাহিত জীবনের স্বস্তিতে। অথচ ঘটনা এখনো সমাপ্ত নয়; আদালত এবং তদন্তই বলে দেবে এই নাটকের প্রকৃত মুখোশ রামকৃষ্ণ রায়ের মত কারা পরে আছে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.