সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে ভগতগাজী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ পরিষদের পীরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক রামকৃষ্ণ রায়কে ঘিরে ‘হানি ট্র্যাপ’, অর্থ আত্মসাৎ ও ধর্মীয় মর্যাদা ক্ষুণ্নের চাঞ্চল্যকর অভিযোগে এলাকা জুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। একজন নীতিবান, সমাজসেবী ও ধর্মীয়ভাবে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে তার চরিত্রহননের চেষ্টা জনমনে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
রামকৃষ্ণ রায় উপজেলার ৩নং খনগাঁও ইউনিয়নের বিশ্বাসপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, বরং শিক্ষা, মানবকল্যাণ ও ধর্মীয় নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এই নৈতিক অবস্থানকেই লক্ষ্যবস্তু করে একদল অসাধু চক্র তাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অভিযোগ উঠেছে—‘হানি ট্র্যাপ’ নামের এই চক্রান্তের মূল নায়ক আগ্রা হর সুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার রায় ও তার সহযোগী বঙ্গ( গপেশ),নিশা,ধলা’র প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসাকে অস্ত্র বানিয়ে একজন ধর্মীয় নেতৃত্ব ও নিরপরাধ শিক্ষককে ফাঁসিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বপন কুমার রায় তার স্ত্রী সম্পা রাণীকে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। ফলে তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক ‘দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন’ অবস্থায় পৌঁছে যায় এবং বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এমন পরিস্থিতিতে, ধর্মীয় ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে রামকৃষ্ণ রায় সম্পা রাণীকে আইনি ও সামাজিক সহযোগিতা দিতে এগিয়ে আসেন। কিন্তু প্রতিশোধপরায়ণ স্বপন কুমার এই সহায়তাকেই তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেন।
অভিযোগ রয়েছে, অতীতে স্বপন কুমার একাধিকবার বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্রলোভন ও হুমকির মাধ্যমে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করেছেন। এবারও তিনি একই কৌশলে পরিকল্পনা করেন। অর্থের বিনিময়ে কিছু স্থানীয় লোককে উসকে দিয়ে রামকৃষ্ণ রায়কে মব লিঞ্চিংয়ের মাধ্যমে জিম্মি করা হয়। এরপর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করানো হয়, যা এক ভয়াবহ আইনি অপরাধ।
বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর একাধিক ধারা লঙ্ঘিত হয়েছে—ধারা ৩৪১: অবৈধভাবে বাধা প্রদান,ধারা ৩৪২: অবৈধভাবে আটক রাখা,ধারা ৩৮৬: ভয় বা জবরদস্তি করে অর্থ আদায়।
এছাড়া, এই জনরোষ দ্বারা হয়রানি ও অবৈধ আটক বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ ও ৩৫ অনুচ্ছেদে বর্ণিত মৌলিক নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
শিক্ষক সমাজ ও ধর্মীয় সংগঠনগুলো একে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নয়, বরং ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধে সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ পরিষদের নেতারা বলেন, “একজন ধর্মীয় সংগঠনের আহ্বায়ককে মিথ্যা ফাঁদে ফেলা মানে পুরো সম্প্রদায়ের মর্যাদা কলঙ্কিত করা।” তারা আরও বলেন, এমন ষড়যন্ত্র সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের এক ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে।
সচেতন নাগরিকরা প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা প্রচারণা ও চরিত্রহননের প্রবণতা এখন এক ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই প্রবণতা রোধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
একজন শিক্ষক সমাজের নৈতিক দিশারী, আর ধর্মীয় সংগঠনের নেতা সমাজের আত্মিক পাথেয়। রামকৃষ্ণ রায়ের মতো একজন নীতিনিষ্ঠ মানুষ যদি মিথ্যা ষড়যন্ত্র, মব লিঞ্চিং ও জোরপূর্বক স্বাক্ষর আদায়ের শিকার হন, তাহলে প্রশ্ন উঠে—আমাদের সমাজের নৈতিক ভিত্তি কতটা নিরাপদ?
এই ঘটনার ন্যায়বিচার শুধু একজন শিক্ষকের জন্য নয়—এটি সত্য, ন্যায়, ধর্ম ও মানবতার পক্ষে সমাজের চূড়ান্ত পরীক্ষা। প্রশাসনের ন্যায্য পদক্ষেপই প্রমাণ করবে, এখনও এই সমাজে ন্যায়ের পাল্লা অন্যায়ের চেয়ে ভারী হতে পারে।