আরিফ উদ্দিনঃ শীতের আগমনে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সর্বত্রই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লেপ-তোষকের কারিগর ধুনকররা। কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের আগমনের সাথে উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী এলাকা থেকে শুরু করে সদরে লেপ-তোষক তৈরিতে ধুনকররা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। উপজেলার হাট-বাজারসহ চিহিৃত পয়েন্ট সমূহে ধুনকররা বিক্রির জন্য লেপ-তোষক তৈরি করে মজুদ করছে। পাশাপাশি বিক্রিও করছে ব্যাপক।
প্রতিবছর নভেম্বর মাস থেকে লেপ-তোষকের দোকানে ক্রেতাদের ভীড় করতে দেখা যায়। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারী মাস লেপ-তোষক বিক্রির মৌসুম চলে। কেউ কেউ দোকানে বসে, আবার অনেক ধুনকররা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে পুরাতন লেপ-তোষক নতুন করে তৈরী করে দিচ্ছেন। পলাশবাড়ী পৌরশহরের এসএম হাইস্কুল মার্কেট ২য়তলা, উপজেলা টাউনহল বারান্দা ছাড়াও উপজেলার ঢোলভাঙ্গা, মাঠেরহাট, ফরিকহাট, তালুকজামিরা বাজার, সমিতির হাট, আমলাগাছী ও কাশিয়াবাড়ীহাটসহ বিভিন্ন হাট-বাজারের চিহিৃত পয়েন্ট সমূহে এখন লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত ধুনকররা। তুলা পরিস্কার করা, ধুনন, সেলাই, কাপড়ে মোড়ানোসহ সব মিলিয়ে চলছে শীতের মৌসুম।
পলাশবাড়ী সদরের হরিণমারী গ্রামের ধুনকর রওশন মিয়া-এ প্রতিনিধিকে জানান, কয়েক বছর ধরে উপজেলা সদরের টাউনহলের বারান্দায় লেপ-তোষক তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। গত বছর গুলোতে লেপ-তোষকের চাহিদা খুব ছিল। এখন শীতের শুরু’র মৌসুমে কাজের চাপটা একটু বেশী। তিনি আরো জানান, এবছর লেপের কাপড় ৫০-৭০ টাকা গজ, তোষকের কাপড় ৫৫-১২০ টাকা গজ। গার্মেন্টস্ তুলা ৫০-১৬০ টাকা, শিমুল তুলা ৪০০ টাকা কেজি। লেপের মজুরী ৩০০-৪০০ টাকা এবং তোষক ২৫০-৩০০ টাকা। এজন্য লেপ-তোষক বিক্রি করে আগের মত লাভ হয় না। শুধু তাই নয়, এখন নতুন লেপ-তোষক বানানোর পাশাপাশি পুরাতন লেপ নতুন করে তৈরি করছেন অনেকেই। শীতের আগমনে অনেক পরিবার তাদের পুরনো লেপ খুলে তুলা পরিস্কারÑধুনিয়ে নতুন কাপড় দিয়ে তৈরি করাচ্ছেন।
পৌরশহরের শিমুলিয়া গ্রামের বেবী বেগম বলেন, নতুন লেপ বানাতে অনেক টাকা লাগে। তাই পুরাতন লেপটা ধুনিয়া আরও কিছু নতুন তুলা মিশিয়ে লেপটা তৈরি করে নিচ্ছি। এতে করে খরচ অনেকটা কম হয়েছে।
লেপ-তোষকের কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে ধুনকরদেরও মজুরী বেড়েছে। তুলা-সুতার দাম ও কারিগরদের মজুরি মিলিয়ে এখন গত বছরের তুলনা খরচ বেশি। সে জন্য লেপের দামও বেড়েছে। ক্রেতারা এ জন্য অর্ডার দিতে নিরুৎসাহিত হয়ে বিকল্প খুঁজছেন।
পলাশবাড়ী পৌরশহরের মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে লেপ-তোষক বিক্রেতা রাজু মিয়া জানান, বর্তমানে তুলার দাম আগের চেয়ে বেশি। আগে যে টাকায় লেপ-তোষক বিক্রি হতো এখন তা বিক্রি হচ্ছে অনেক বেশী দামে। তাই অনেকেই শীত নিবারণের জন্য লেপের বদলে কম্বল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখন বাজারে দেশী-বিদেশী নানা ধরণের কম্বল পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু চায়না কম্বল তুলনামূলক ভাবে দামে কম হওয়ায় এর চাহিদাই বেশী।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.