সম্পাদকীয়ঃ
ধর্ম মানুষকে নৈতিকতা,ভ্রাতৃত্ব এবং শান্তির শিক্ষা দেওয়ার কথা, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এবং স্থানে এটি অর্থ উপার্জনের একটি মাধ্যম ছাড়া আর কিছুই নয়।
উদাহরণস্বরূপ, মুসলিম সমাজে যেমন ভুয়া পীর, অলৌকিক ক্ষমতার নামে জনগণের বিশ্বাস এবং জনগণের দুর্দশার সুযোগ নেয় এবং অর্থ উপার্জন করে।
একইভাবে হিন্দু সমাজেও এখন অনেক বড় বড় মন্দির নির্মিত হচ্ছে এবং ভক্ত তথা বিশ্বাসীদের দান করা অর্থকে আয়ের প্রধান উৎস করা হচ্ছে।
এইভাবেও, ধর্মীয় অনুভূতির দৃষ্টিকোণ থেকে সাধারণ মানুষকে শোষিত করা হয়। প্রকৃত ধর্মীয় শিক্ষা হল ভালো ও সৎ হওয়া, মানবজাতির অবস্থার উন্নতিতে নিজের শক্তি বিনিয়োগ করা এবং অন্যায় ও ভণ্ডামি এড়িয়ে চলা।
অতএব, মসজিদ, মন্দির, গির্জা বা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ধর্মের বাণিজ্যিকীকরণ প্রকৃত ধর্মের পরিপন্থী।
ধর্ম ব্যবসা সমাজের উপর, মানুষের মনের উপর এবং অর্থনীতির উপরও এক বিরাট প্রভাব ফেলে।
ভক্ত তথা অনুসারীদের অন্ধ নির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং যুক্তি, বৈজ্ঞানিক ও যৌক্তিক চিন্তাভাবনা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
ধর্মকে কেন্দ্র করে ভন্ড পীর, ভ্রান্ত পুরোহিতদের প্রভাব,গুরুর দল, অথবা তথাকথিত সাধুদের দলও ধর্মকে ঘিরে ফেলতে শুরু করে।
অশিক্ষিত এবং নিরীহ মানুষ শোষণের শিকারে পরিণত হয়।
ভক্তদের কাছ থেকে দান, চাঁদা,নজরানা এবং মানত সংগ্রহের মাধ্যমে একটি বিশাল মূলধন সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।
এই পুঞ্জীভূত অর্থ প্রায়শই মানুষের কল্যাণে ব্যয় না করে, অনেকটা ব্যক্তিগত বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য, অথবা ব্যবসা বা ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ব্যয় করা হয়।
দরিদ্র মানুষ তার অবশিষ্ট সম্পদ দিয়ে দান করে এবং এইভাবে আমাদের অর্থনৈতিক বৈষম্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মন্দির,মাজার,আশ্রম বা গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই সমান্তরাল অর্থনৈতিক শক্তিতে রুপ নেয়।
মানুষ ব্যাপকভাবে ভয়ের উপর ভিত্তি করে তাদের বিশ্বাসের শোষণের দ্বারা প্রভাবিত, যেমন মন্দ, অভিশাপ, দুর্ভাগ্য ইত্যাদি।
এর প্রভাবে কুসংস্কার বৃদ্ধি পায় এবং যুক্তি তর্ক কমে যায়।
অনেকেই বিশ্বাস করে শুধুমাত্র টাকা/দান দিয়েই মুক্তি বা পুণ্য পাওয়া যায়।
আত্মবিশ্বাস ও স্বাধীন চিন্তা নষ্ট হয়,মানুষ অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
ধর্মের নামে মন্দির, মাজার,আস্তানা বা অন্য কোনো ধর্মীয় স্থাপনা বানিয়ে যদি সেখানে ব্যবসা বা প্রতারণামূলক কার্যক্রম চলে, তাহলে সেটা ধর্মকেও কলঙ্কিত করে এবং সাধরণ মানুষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। এবিষয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব শীল কতৃপক্ষ ও সুশীল সমাজের ভুমিকা অতীব জরুরি।
মন্দির-মাজারের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা,যাতে ধর্মীয় আচার (কার্যক্রম) এর আড়ালে অসৎ ব্যবসা না হয়।
এছাড়াও দান-অনুদান বা ভক্তদের দেওয়া অর্থের সঠিক হিসাব রাখার বাধ্যবাধকতা তৈরী করা।
সরকারের উচিত ধর্মের নামে ব্যবসায়ীরা কীভাবে মানুষকে শোষণ করে তা নিয়ে গণসচেতনতা তৈরী কার।
সাধারণ মানুষকে বোঝানো যে ধর্মীয় অনুভূতিকে ব্যবসার কাজে ব্যবহার করা উচিত নয়।
মিডিয়া,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে এই ধরনের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা।
প্রকৃত ধর্মপ্রাণ ও সৎ নেতাদের সামনে আনা,যাতে ভক্তরা সঠিক বার্তা পায়।
ধর্মের নামে অপব্যবহার নিয়ে গবেষণা করে সমাজে প্রচার চালানো।
সারকথা, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা করা শুধু সরকারের নয়, বরং সমাজেরও দায়িত্ব। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে ধর্মের নামে প্রতারণা ও ব্যবসা চলতেই থাকবে।