সম্পাদকীয়ঃ
সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে গণপিটুনির ঘটনা। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা সমাজে চরম নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে গাইবান্ধার দুই উপজেলায় ঘটে গেছে দুইটি নির্মম গণপিটুনি, যাতে প্রাণ গেছে চারজনের।
১ নভেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে গণপিটুনিতে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়দের দাবির বিপরীতে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে চুরির নিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি বলে জানা গেছে।
এর পরদিন ২ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে তিনজনকে ধরে গণপিটুনি দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে আটক ও তদন্তের দায়িত্ব রাষ্ট্রের, কিন্তু গণপিটুনির ঘটনায় বারবার জনতার হাতে প্রাণ হারাচ্ছে নিরপরাধ মানুষও। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে আইনের শাসন দুর্বল হওয়া, জনতার ভুল ধারণা ও তাৎক্ষণিক প্রতিশোধের মানসিকতা এই ধরনের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সন্দেহজনক পরিস্থিতি দেখলে নাগরিকরা নিজেরাই ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত। অন্যদিকে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত না হলে এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে।
গণপিটুনি যে শুধু আইনভঙ্গ নয়, তা গভীরভাবে অমানবিকও, এ কথা আমরা কি ভুলে যাচ্ছি? একটি সন্দেহ, কয়েকজনের চিৎকার, আর মুহূর্তেই একজন মানুষের জীবন শেষ, এভাবে কি কোনো সভ্য সমাজ টিকে থাকতে পারে?
গাইবান্ধার ঘটনাগুলো আমাদের বড় করে প্রশ্ন করে এভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু এর দায় নেবে কে? অপরাধী চিহ্নিত হবে, মামলা হবে কিন্তু সমাজের এই মানসিকতার দায় থেকে কি আমরা বের হতে পারছি?
আইনের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনা, জনসচেতনতা বাড়ানো এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা ছাড়া এই প্রবণতা থামানো কঠিন। মানবিকতার জায়গায় যদি হিংসা জায়গা দখল করে নেয়, তাহলে এমন মৃত্যু আমরা আরও দেখতেই থাকবো।