সম্পাদকীয়ঃ
আমাদের সমাজে আজকাল একটি নতুন অভ্যাস চোখে পড়ে যে, জানুক বা না জানুক, যেকোনো বিষয়ে মতামত দিতেই হবে। আর মতামত দেওয়ার সাথে সাথে যোগ হয় বাড়তি পাণ্ডিত্য দেখানোর চেষ্টা। এমনকি নিজের বোঝাপড়া কম হলেও অন্যের ছোট ভুলও ধরতে কেউ পিছিয়ে নেই। যেন ভুল ধরতে পারলেই নিজের গুরুত্ব আরও বাড়ে!
এই প্রবণতা কথোপকথনের স্বাভাবিক পরিবেশকেই নষ্ট করছে। আলোচনা মানে হওয়া উচিত মতের বিনিময়, যুক্তির লেনদেন, আর শেখার সুযোগ। কিন্তু সেখানে এখন জায়গা নিচ্ছে তর্ক, ভুল ধরাধরি আর নিজেদের ‘সবজান্তা’ প্রমাণের প্রতিযোগিতা।
“যারা ভেবে চিন্তে কথা বলতে চান, তারা অযথা উচ্চকণ্ঠদের ভিড়ে অনেক সময় আড়াল হয়ে যান।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে। সেখানে যে কেউ কয়েক লাইন লিখে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। লাইক-শেয়ার আর মন্তব্যের ভিড়ে ভুল তথ্যও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে। আর কেউ ভুল ধরলেই যেন প্রমাণ হয়ে যায়
“আমি তোমার চেয়ে বেশি জানি”। অথচ এই ভুল ধরার মধ্যেও থাকে অনেক ভুল, কারণ নিজেই অনেক সময় তথ্য যাচাই করেন না।
ভুল স্বীকার করা বা না জানা মানেই ছোট হয়ে যাওয়া এই ধারণা ভুল। বরং স্বীকার করার মধ্যেই রয়েছে শেখার সম্ভাবনা। জানার ভান না করে যদি সত্যিকার অর্থে জানা মানুষগুলোর কাছ থেকে জ্ঞান নেওয়া যায়, তবে আলোচনা আরও গ্রহণযোগ্য ও উপকারী হয়ে উঠে।
আমাদের দরকার এমন একটি পরিবেশ, যেখানে সবাই অনায়াসে মত প্রকাশ করতে পারে, আবার একই সঙ্গে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতেও পারে। যুক্তিহীন তর্ক বা অহেতুক পাণ্ডিত্য নয় – শান্ত, সংলাপ-সমৃদ্ধ আলোচনা একটি সুস্থ সমাজ গঠনের মূল ভিত্তি। তাই ভুল ধরাধরি নয়, বরং বিনয়, শ্রবণশীলতা এবং শেখার মানসিকতা সমাজে ফিরিয়ে আনা জরুরি।