সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
পীরগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রতিষ্ঠান গুডলাক ক্লাব আজ টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ক্লাব, যা ২০১১ সালে সরকারি নিবন্ধন লাভ করে, শুধু বিনোদন বা সভা নয় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক বিকাশ, সমাজসেবা ও মানবিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু এখন এই ক্লাবের জমি ঘিরে চলছে এক ভয়াবহ বিরোধ।
পীরগঞ্জ পৌরশহরের ৭ নং ওয়ার্ড, গুয়াগাঁওয়ে অবস্থিত গুডলাক ক্লাব কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০১–২০০২ সালে তারা ৮৪৬ দাগে ১.৫০ শতাংশ এবং ৮৪৭ দাগে ০.২৫ শতাংশ জমি বৈধভাবে ক্রয় করে। এই জমির উপরেই ক্লাবের স্থাপনা, বিভিন্ন জনসেবামূলক কার্যক্রম এবং স্থানীয় তরুণদের মিলনকেন্দ্র গড়ে ওঠে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে জমির কাগজে–কলমে নতুন মালিকের নাম ওঠাতে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। বিরোধীরা দাবি তোলে, ৮৪৭ দাগের অংশটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে । অথচ, মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা বলে অন্য কথা।ওই অংশে আজও ক্লাবের সীমানা ও পুরনো স্থাপনার চিহ্ন দৃশ্যমান।
বিতর্কের সূত্রপাত ২০০৯ সালে। জমির মূল মালিক জিয়াউর রহমান এক শতক জমি দেলোয়ার হোসেনের নিকট বিক্রি করেন। কিন্তু ২০২৫ সালে একই অবস্থান ও দাগ নম্বরের জমি পুনরায় বিক্রি করেন ফজলুর রহমানের কাছে। এই দ্বৈত বিক্রয় থেকেই সংঘাতের জন্ম। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয়।
পরিস্থিতি চরমে ওঠে ২০২৫ সালের ২১ অক্টোবর। জমি দখলের আশঙ্কায় ক্লাব কর্তৃপক্ষ আদালতের ১৪৪ ধারা জারির আদেশ নিয়ে আসে । কিন্তু ২৫ অক্টোবর মধ্যরাতে নেতৃত্বে একদল লোক আইন অমান্য করে ক্লাব প্রাঙ্গণে হামলার চেষ্টা চালায়। ক্লাবের সদস্যরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা সরে যায়, কিন্তু পরদিনই শুরু হয় পাল্টা মামলা। দেলোয়ার হোসেনের পুত্র আফসান জানি হিমেল বাদি হয়ে আব্দুস সামাদ, মো. বাদশা, মমতাজ আলীসহ অজ্ঞাত ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
এতেও থামেনি সহিংসতা। ঐ রাতেই ভোর চারটার দিকে ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করা হয়,জ্বলে যায় নথিপত্র, ক্রীড়া উপকরণ ও আর্কাইভ। স্থানীয়দের মতে, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত আগুন, যাতে প্রমাণ মুছে ফেলা যায়।
ক্লাবের সভাপতি আব্দুস সামাদ বলেন, “প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছি না, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যারা আমাদের জমি দখল করতে চায়, তারা প্রভাবশালী; প্রশাসন নীরব।”
এই নীরবতা এখন প্রশ্নের মুখে। একটি নিবন্ধিত সামাজিক প্রতিষ্ঠান যখন বৈধ মালিকানা সত্ত্বেও নিজ সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয় তখন সেটি কেবল জমি বিরোধ নয়, বরং রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার নৈতিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি।