সাংবাদিকতা হলো সমাজের দর্পণ। গণমাধ্যমের দায়িত্ব শুধু খবর পরিবেশন নয়, বরং সমাজকে সচেতন করা, রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থাকে জবাবদিহির মধ্যে আনা। এজন্য সাংবাদিকতায় বিষয়ভিত্তিক বিট বা বিভাগ রয়েছে—রাজনীতি, অপরাধ, অর্থনীতি, খেলাধুলা, বিনোদন ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায়, বিনোদন সাংবাদিকতার উজ্জ্বলতা অন্য সব বিটকে ছাড়িয়ে গেছে।
সম্প্রতি নারী উদ্যোক্তা ও ইনফ্লুয়েন্সার রোবাইয়াত ফাতিমা তনি-র বিয়ের খবর দেশের শীর্ষ গণমাধ্যম থেকে শুরু করে আঞ্চলিক সংবাদপত্র পর্যন্ত ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। এটি দেখায় যে, বিনোদন বিভাগের সাংবাদিকরা সোশ্যাল মিডিয়ার আলোচিত বিষয় দ্রুত ধরতে পারেন এবং পাঠকের কাছে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে সক্ষম।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—দেশে যখন চুরি, ছিনতাই, ব্যাংক লুট, রাজনৈতিক অসংগতি, ধর্ম নিয়ে ব্যবসা কিংবা সামাজিক অনিয়ম ঘটে, তখন সেই খবরগুলো কি একই গুরুত্বে প্রচারিত হয়? কেন অপরাধ, অর্থনীতি বা রাজনীতি বিটের সাংবাদিকরা বিনোদন সাংবাদিকদের মতো সক্রিয় হতে পারেন না?
মনে রাখতে হবে, সাংবাদিকতার আসল দায়িত্ব জনস্বার্থ রক্ষা। মানুষের সমস্যা, অনিয়ম ও সম্ভাবনার খবরই আসলে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিনোদন সাংবাদিকদের মতো উদ্যমী ও তৎপর হলে অপরাধ, অর্থনীতি, রাজনীতি বা সমাজ উন্নয়ন বিষয়েও একই প্রভাব তৈরি করা সম্ভব।
গণমাধ্যম যদি কেবল বিনোদনের আলোয় ঝলমল করে, তবে সমাজের বাস্তব চিত্র আড়াল হয়ে যাবে। সময় এসেছে সব বিটের সাংবাদিকদের সমান দায়িত্বশীল ও সাহসী হয়ে ওঠার। সংবাদমাধ্যমের প্রকৃত শক্তি তখনই প্রকাশ পাবে, যখন বিনোদনের খবরের মতোই সমাজের গভীর সমস্যাগুলোও একই গুরুত্বে আলোচিত হবে।