সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে আত্মহত্যার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন যারা বিষপান করে আত্মহননের চেষ্টা করেছেন। এর আগে গত ছয় মাসে আরও প্রায় দুই শতাধিক এমন চেষ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হন। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় হলো এই প্রবণতা নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই প্রায় সমান, তবে নারীদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি, যা প্রায় ৭০ শতাংশ। এই সংখ্যাগুলো শুধু পরিসংখ্যান নয়, এগুলো পীরগঞ্জের সামাজিক ও মানসিক সংকটের এক ভয়াবহ প্রতিচ্ছবি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, আত্মহত্যার প্রচেষ্টার পেছনে মূলত চারটি কারণ বেশি প্রভাব ফেলছে বেকারত্ব, সম্পর্কজনিত ভাঙন, পারিবারিক চাপ এবং সামাজিক অবমূল্যায়ন। স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের ভাষায়, “পীরগঞ্জ এখন এমন এক এলাকা যেখানে আত্মঘাতী মনোভাব গভীরভাবে গেঁথে গেছে মানুষের চিন্তা ও সংস্কৃতিতে।” পরিবারে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব প্রায় নেই বললেই চলে। পিতা-মাতা সন্তানকে নিয়মিত শুনিয়ে দেন,“তোমার দ্বারা কিছু হবে না”, “তুমি কোনো কাজের নও”।এই ধরনের কথাগুলো আত্মসম্মানবোধ ধ্বংস করে দেয় কিশোর-তরুণদের মধ্যে।
পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বদরুল হুদা বলেন, “আমরা মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব না দিয়ে কেবল শারীরিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিই। ফলে হতাশা, ভয়, এবং আত্মঅবমূল্যায়ন সমাজে মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ছে।” তিনি আরও বলেন, “আবেগপ্রবণ মানুষ যখন সামাজিক সহানুভূতি হারায়, তখন আত্মহত্যা হয়ে ওঠে একমাত্র ‘সমাধান’—যা আসলে ভয়াবহ এক আত্মপ্রবঞ্চনা।”“পীরগঞ্জ এমন এক এলাকা, যেখানে আত্মহত্যার প্রবণতা ভয়াবহভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে,”— মন্তব্য করেন পীরগঞ্জ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ বদরুল হুদা।
তিনি আরও যোগ করেন, “বেকারত্ব, সম্পর্কজনিত টানাপোড়েন, আবেগপ্রবণ মনোভাব এবং দারিদ্র্য এই চারটি উপাদান এখানে আত্মবিধ্বংসী প্রবণতার মূল চালিকা শক্তি হয়ে উঠেছে।”
পীরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, বিষপানের পর যারা বেঁচে যান, তারা বেশিরভাগই আর মানসিক চিকিৎসা নেন না। পরিবারের সদস্যরাও লজ্জা বা সামাজিক ভয়ে বিষয়টি আড়াল করেন। এই নীরবতা আত্মহত্যার চক্রকে আরও গভীর করে তোলে।
পীরগঞ্জ সচেতন নাগরিকদের ভাষ্যমতে, আত্মহত্যা ঠেকাতে এখন সময় এসেছে মানসিক স্বাস্থ্যকে স্থানীয় উন্নয়ন আলোচনার কেন্দ্রে আনার। স্কুল-কলেজে কাউন্সেলিং, পরিবারে ইতিবাচক যোগাযোগ, স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে মানসিক সহায়তা সেল।এসব ব্যবস্থা না নিলে এই প্রবণতা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।