সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ১১ নং বৈরচুনা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আজলাবাদ গ্রাম যেন এখন মৃত্যুপথযাত্রী। টাঙন নদীর তীব্র ভাঙনে প্রতিদিন মাটি গিলে খাচ্ছে নদী, হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি, ইতিহাস, স্বপ্ন। অন্তত ৩০০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে । এক সময়ের জনবহুল গ্রামটি এখন ভাঙনের আতঙ্কে নিঃস্ব মানুষের আর্তনাদে মুখর।
১১নং বৈরচুনা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মো. সানাউল্লাহ নূরী বলেন, “দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। আজলাবাদ গ্রামের টাঙন পাড় এখন মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদীর পাড়ে দাঁড়ালে বুক কেঁপে ওঠে এই ভয়ে ;কখন যে নিচে ধ্বসে পড়বে, বলা যায় না।”
নদী ভাঙনের কারণে অনেকে ইতিমধ্যেই অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ভুক্তভোগী তরিকুল ইসলাম জানান, “আমার পাকা ঘর, গাছপালা, সব কিছুই নদী নিয়ে গেল। এখন পরিবারের সবাইকে নিয়ে পাশের গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।” অপর এক ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম বলেন, “পাঁচ শতক জমি ছিল, এখন এক চুলও নেই। প্রতিদিনই দেখি নদী আরও এগিয়ে আসছে।”
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙন রোধে প্রশাসন বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। জরুরি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে পুরো গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
পীরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার) জাকারিয়া ইসলাম জানান, “টাঙন নদীর আজলাবাদ এলাকায় ভাঙন পরিস্থিতি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। ভাঙন ঠেকাতে প্রাথমিকভাবে জিওব্যাগ ফেলা ও বাঁধ সুরক্ষার প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া মাত্রই কাজ শুরু হবে।”
তবে স্থানীয়দের মতে, আশ্বাস দিয়ে সময় পার করলেও নদী কাউকে সময় দিচ্ছে না। প্রতিটি বর্ষায় নদী নতুনভাবে গ্রাস করছে তাদের জীবনের নিশ্চয়তা। কেউ হারাচ্ছে ঘর, কেউ হারাচ্ছে ফসলের জমি, কেউ আবার হারাচ্ছে প্রজন্মের স্মৃতি।
আজলাবাদের টাঙনপাড় এখন কেবল ভাঙা পাড় নয়, এটা মানুষের হারানো জীবনের প্রতীক। এখানে নদী শুধু ভূমি গিলছে না, গিলে নিচ্ছে আশা, গর্ব আর ইতিহাসের টুকরো। যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, আগামী বর্ষায় হয়তো মানচিত্র থেকে মুছে যাবে আজলাবাদ নামের এই গ্রামটি।