 
							
							 
                    সাকিব আহসান, পীরগঞ্জ,ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের নাকাটি ব্রিজের পশ্চিম দিকে অবস্থিত জমিতে বালু মহাল তৈরি করে বালু-বিক্রয়-ব্যবসার দুরভিসন্ধি নিয়ে অর্ধ শতাধিক ফলজ ও বনজ গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় জমির মালিক মো. মতিউর রহমান (৫০) থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, কষা মৌজার আরএস খতিয়ান নং ৮০,জেএল নং ৪৩, দাগ নং ৭৪১ এর ১৭.১০ শতক জমি তার পৈতৃক সম্পত্তি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই জমিতে মালিকানাসূত্রে ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু একই এলাকার সালাউদ্দিন (৪৫), আলাউদ্দিন (৫০)- উভয়ের পিতা জাফোর আলী( মৃত) মাতা মোছাঃ বিলকিছ বেগম, সাইফুল আলম (৪৫)- পিতাঃ কাসেম আলী ( মৃত), রেজাউল করিম (৩৭)- পিতাঃ খাসা মাহামুদ, দুলাল(৪৫)- পিতাঃ আজিজুর হক, মো. বাবুল হোসেন (৪৭), মো. আব্দুল হান্নান( ৪০) – উভয়ের পিতাঃ জাফোর আলী ( মৃত)সহ কয়েকজন ব্যক্তি ওই জমি দখলের উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের হয়রানি চালিয়ে আসছিলেন।
গত ২৬ অক্টোবর রাতের আঁধারে উল্লিখিত ব্যক্তিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ একদল লোক নিয়ে ওই জমিতে প্রবেশ করে প্রায় ৪০টির বেশি ফলজ ও বনজ গাছ কেটে ফেলে। এতে প্রায় এক লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী মতিউর রহমান। স্থানীয়রা বাধা দিতে গেলে অভিযুক্তরা হুমকি প্রদান করে স্থান ত্যাগ করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মতিউর রহমান বলেন, “আমি শান্তিপূর্ণভাবে আমার পৈতৃক জমি ভোগদখল করছিলাম। প্রতিপক্ষ পরিকল্পিতভাবে জমি দখলের উদ্দেশ্যে আমার আর্থিক ক্ষতি ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করেছে। এখন আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল সম্পত্তি বিরোধ নয়, বরং ফৌজদারি অপরাধের আওতায় পড়ে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা 441 ও 447 অনুযায়ী অনুমতি ছাড়া কারও জমিতে প্রবেশ করা “অপরাধমূলক অনুপ্রবেশ” (Criminal Trespass)। আবার ধারা 427 অনুসারে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পত্তি ধ্বংস করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
এছাড়া, বন আইন, ১৯২৭–এর ধারা ২৬(১) অনুযায়ী, অনুমতি ছাড়া কারও মালিকানাধীন বা সরকারি ভূমিতে গাছ কাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একই সঙ্গে, যদি প্রমাণিত হয় অভিযুক্তরা অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধভাবে প্রবেশ করেছে, তাহলে সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯–এর ধারা ৬(২)(ক) অনুযায়ী এটি “ভয়ভীতি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উদ্দেশ্যে সংঘটিত সহিংস কাজ”—অর্থাৎ সন্ত্রাসী তৎপরতা হিসেবে গণ্য হতে পারে।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, “লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, জমি দখলের উদ্দেশ্যে এমনভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। সময়মতো কঠোর আইন প্রয়োগ না হলে এসব অপরাধ গ্রামীণ নিরাপত্তা ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ বার্তা বয়ে আনবে।