সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসে দীর্ঘদিন ধরে তহশিলদার ও দালাল চক্রের যোগসাজশে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এখানে সরকারি সেবার নামে চলছে এক ধরনের “পেপার ওয়ার্ক বাণিজ্য” যেখানে ভূমি সংক্রান্ত যেকোনো সেবা নিতে গেলে প্রথমেই সেবাগ্রহীতাকে দালালের দ্বারস্থ হতে হয়।
তহশিলদার কামিনী কুমার রায়কে প্রশ্ন করতে গেলে তিনি বলেন,’ আমি কিছুদিন পর পিআরএল-এ যাব, আমার দপ্তরে লোকবল সংকট। নিজেকেই সব সামলাতে হয়।
দালালচক্রের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ” এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। এখানে যে কেউ আসতে পারে।”
অফিসের নিয়ম অনুযায়ী জমির খতিয়ান, নামজারি, মিউটেশন বা দলিল সংক্রান্ত কাজের জন্য সুনির্দিষ্ট সরকারি ফি নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এসব সেবা নিতে গেলে অতিরিক্ত অর্থ ছাড়া কোনো কাজ এগোয় না। স্থানীয় দালাল রিপন নামে এক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করে তহশিলদার কামিনী কুমার রায়ের কাছে পৌঁছে দেন। এর বিনিময়ে অফিসের ভেতরে ও বাইরে আর্থিক লেনদেন হয় বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে তহশিলদারের টেবিলে কাগজপত্রের স্তূপ, পাশে দালাল রিপন কাগজ দেখিয়ে সেবাগ্রহীতার পক্ষে আলোচনা করছেন। অথচ ভূমি অফিসের মূল দায়িত্ব হলো সরাসরি জনগণের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা। দালালের মাধ্যমে এসব কাজ পরিচালনা করা স্পষ্টভাবে সরকারি কর্মচারী আচরণবিধি ও দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের পরিপন্থী।
নাকাটি বাজারের নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন যে ভূমি অফিসে সরাসরি গেলে কর্মকর্তারা নানা অজুহাতে “আগে বাইরে থেকে কাগজ ঠিক করে আনতে” বলেন। আর সেই “বাইর” মানেই হচ্ছে দালাল রিপন বা তার সহযোগীরা। এভাবে একটি অনানুষ্ঠানিক কমিশনভিত্তিক অর্থনৈতিক চক্র তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রতিটি নামজারি বা খতিয়ান সংশোধনের পেছনে গড়ে ৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ হাতবদল হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় এক সেবাগ্রহীতা বলেন, “সরকারি ফি দেই, তারপরও কাজ হয় না—দালালের হাতে টাকা না দিলে ফাইল নড়ে না।”
আইন অনুযায়ী, ভূমি অফিসে কোনো দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীর সম্পৃক্ততা দণ্ডনীয় অপরাধ। তহশিল অফিসের এমন অনিয়ম প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও তদারকির অভাবকেই নির্দেশ করে।