সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
“সদস্য আনলে টাকা পাবেন”— এই প্রলোভন এখন আইনের চোখে প্রতারণা। বৈধ শুধু সেই ব্যবসা, যেখানে আয় আসে বাস্তব পণ্য বিক্রি থেকে।
এমএলএম (Multi-Level Marketing) বা বহুস্তর বিশিষ্ট বিপণন হলো এমন একটি বিক্রয় পদ্ধতি যেখানে সদস্যরা শুধু নিজের বিক্রির মাধ্যমে নয়, বরং নিজেদের অধীনে নতুন সদস্য সংগ্রহ করে তাদের বিক্রির ওপরও কমিশন পান। এই ব্যবসার মূল কাঠামো হল পণ্য বিক্রি, সদস্য সংগ্রহ, কমিশন ভাগাভাগি।
বাংলাদেশের আইনি অবস্থান অনুযায়ী
বাংলাদেশে এমএলএম বাণিজ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এবং আংশিকভাবে নিষিদ্ধ।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে Tiens, Mxn সহ নাম না জানা অনেক এমএলম ব্যবসা চালু রয়েছে।
যেসব প্রাসঙ্গিক আইন প্রচলিত রয়েছে তা হল ‘ডাইরেক্ট সেলস আইন, ২০২৩” (Direct Sales Act 2023)
এর আওতায় এমএলএম কার্যক্রমকে স্পষ্টভাবে পৃথক করে দেখা হয়েছে। প্রথমত, বৈধ ডাইরেক্ট সেলস (যেখানে পণ্য বাস্তবে বিক্রি হয়, প্রতারণা নয়) অনুমোদনযোগ্য।
দ্বিতীয়ত, পিরামিড স্কিম বা চেইন-ভিত্তিক নিয়োগমূলক ব্যবসা, যেখানে আয় মূলত নতুন সদস্য সংগ্রহের মাধ্যমে হয় যা আইন অনুযায়ী অপরাধ।
২০১৩ সালে সরকার “এমএলএম কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩” (Multi-Level Marketing (Control) Act, 2013) জারি করে, যা এখনো কার্যকর। এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা রয়েছে।
সরকারের নিবন্ধন ছাড়া এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করা যাবে না ( ধারা-৪)। পিরামিড স্কিম বা শুধু সদস্য নিয়োগভিত্তিক ব্যবসা নিষিদ্ধ ( ধারা-৫)।
বেআইনি এমএলএম কার্যক্রমে জড়িত থাকলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে ( ধারা -২০)।
বাংলাদেশে অতীতে এমএলএম ছদ্মবেশে পিরামিড স্কিম চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে, যার ফলে সরকার এই খাতের প্রতি কঠোর অবস্থান নেয়।
বর্তমানে, শুধুমাত্র নিবন্ধিত ও পণ্য-কেন্দ্রিক সরাসরি বিক্রয় প্রতিষ্ঠান (যেমন অ্যামওয়ে বা অরিফ্লেম ধরণের মডেল, যদি বৈধভাবে নিবন্ধিত হয়) পরিচালনা করতে পারে —
কিন্তু “সদস্য আনলে টাকা পাবেন” টাইপ ব্যবসা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।
পণ্য বিক্রয়নির্ভর এমএলএম (সরকার নিবন্ধিত) শর্তসাপেক্ষে বৈধ।
সদস্য আনায়ন-নির্ভর পিরামিড স্কিম সম্পূর্ণ বেআইনি। বাংলাদেশে এমএলএম আইনসিদ্ধ নয়, যদি তা শুধুমাত্র সদস্যভিত্তিক বা বিনিয়োগ ফেরতের প্রতিশ্রুতিমূলক হয়।
শুধু সরকারি অনুমোদন ও বাস্তব পণ্য বিক্রয়নির্ভর সরাসরি বিপণন (Direct Selling) কার্যক্রম সীমিতভাবে বৈধ।