সাকিব আহসান,পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওঃ
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বলদিয়ারা গ্রামে অবস্থিত আনন্দ উত্তরা মাস্টার ইউনিটে ২০২৫ সালের ৮, ৯ ও ১০ অক্টোবর তিন দিনব্যাপী ‘কীর্তন দিবস’ উদযাপিত হয়েছে। আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ, বাংলাদেশ-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে দেশজুড়ে অসংখ্য মার্গী ভক্ত, কীর্তনীয়া দল ও স্থানীয় মানুষ অংশ নেন। ধর্মীয় উচ্ছ্বাস, সেবার মনোভাব এবং সাংস্কৃতিক আবহে অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় আধ্যাত্মিক মিলনমেলায়।
৮ অক্টোবর কর্মসূচির প্রথম দিনে তিন ঘণ্টাব্যাপী অখণ্ড কীর্তন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় মার্গী ও ভক্তবৃন্দ। কীর্তন শেষে “কীর্তন দিবসের তাৎপর্য ও মানবিক মূল্যবোধ” শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা বলেন, আনন্দমার্গের প্রবর্তক ধর্মগুরু শ্রীশ্রী আনন্দ মূর্ত্তিজী মানবকল্যাণ ও আত্মজাগরণের পথে অখণ্ড তারকব্রহ্ম ‘বাবা নাম কেবলম্’ কীর্তনকে এক মহৎ সাধনার রূপে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর এই দীক্ষা মানুষকে আভ্যন্তরীণ শান্তি ও সর্বজনীন ঐক্যের পথে পরিচালিত করে।
৯ অক্টোবর দিনব্যাপী ছিল দাতব্য চিকিৎসা সেবা ও নরনারায়ণ সেবা। স্থানীয় দরিদ্র ও অসহায় মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি শতাধিক কৃষকের মধ্যে শীতকালীন সবজির বীজ বিতরণ করা হয়, যা সমাজসেবামূলক উদ্যোগ হিসেবে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের সদস্যরা জানান, ধর্মচর্চার পাশাপাশি মানবসেবা ও পরিবেশসংরক্ষণই আনন্দমার্গ দর্শনের অন্যতম লক্ষ্য।
বলদিয়ারা গ্রাম তিন দিনজুড়ে মুখরিত ছিল “বাবা নাম কেবলম্” কীর্তনের ধ্বনিতে। চব্বিশ ঘণ্টা ধরে চলা অখণ্ড তারকব্রহ্ম কীর্তনে অংশ নেন ঢাকা, গাজীপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন হরি পরিমণ্ডল গোষ্ঠীর কীর্তনীয়া দল। ভক্তরা বলেন, এমন পরিবেশে কীর্তনের অভিজ্ঞতা আত্মশুদ্ধি ও সমাজে ইতিবাচক স্পন্দন সৃষ্টির অনন্য সুযোগ এনে দেয়।
১০ অক্টোবর ছিল সমাপনী দিন। আনন্দ উত্তরা মাস্টার ইউনিটের রেক্টর আচার্য নিত্যতত্ত্বানন্দ অবধূত ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শ্রী পরিমল দাস আনন্দমার্গ দর্শনের দার্শনিক দিক নিয়ে আলোচনা করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক মো. জিয়াউল ইসলাম জিয়া, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন জনাব আব্দুর সবির শফি, সাবেক চেয়ারম্যান, জাবরহাট ইউনিয়ন পরিষদ। সভাপতিত্ব করেন আচার্য সুজিতানন্দ অবধূত, আর এস, আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘ, বাংলাদেশ।
আলোচনা শেষে অতিথিবৃন্দ কৃষকদের হাতে সবজির বীজ তুলে দেন এবং কীর্তন উৎসবে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের প্রশংসা করেন। এরপর এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ত্রিদিবসীয় কর্মসূচির পরিসমাপ্তি ঘটে। সংগীত, নৃত্য ও কীর্তনের আবহে ভাসমান এই অনুষ্ঠানটি প্রমাণ করে, ধর্মীয় ও মানবিক চেতনার সংমিশ্রণে সমাজে সাম্য, সহমর্মিতা ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দেওয়াই আনন্দমার্গের মূল লক্ষ্য।
পীরগঞ্জ উপজেলার আনন্দ উত্তরা মাস্টার ইউনিটে আয়োজিত কীর্তন দিবস ২০২৫ শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং মানবসেবা, পরিবেশপ্রেম ও সামাজিক ঐক্যের এক অনন্য উদযাপনে পরিণত হয়।