প্রতিবেদক,মোঃ ফেরদাউছ মিয়াঃ
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াহিদা বেগম। অথচ কয়েক মাস আগেই হাইকোর্ট তাকে আদালতের আদেশ অমান্য করায় তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেছিলেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই ব্যাংকিং মহলে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনা।
এ ঘটনায় সাংবাদিক ও জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক জাভেদ হোসেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগপত্রে ওয়াহিদা বেগমকে “ফ্যাসিবাদের দোসর” আখ্যা দিয়ে তাকে অবিলম্বে এমডি পদ থেকে অপসারণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে দিলকুশাস্থ মুন টাওয়ার সংক্রান্ত একটি ঋণ মামলায় আদালতের আদেশ অমান্য করার দায়ে ওয়াহিদা বেগমসহ অগ্রণী ব্যাংকের আরও চার কর্মকর্তাকে তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
দণ্ডপ্রাপ্ত এমন একজন কর্মকর্তা কীভাবে রাকাবের মতো রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে পুনর্বহাল হলেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে ব্যাংকিং অঙ্গনে। অভ্যন্তরীণ সূত্রের বরাতে জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত থাকাকালে তিনি ঘুষের বিনিময়ে পদোন্নতি ও বদলি বাণিজ্যে জড়িত ছিলেন। ২০২৪ সালের একটি প্রমোশন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৪০ জন কর্মকর্তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঘুষ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়া, কর্পোরেট গ্যারান্টি ছাড়া ঋণ অনুমোদন, সিন্ডিকেট চালানো এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ ও প্রমোশন বাণিজ্য করার মতো গুরুতর অভিযোগও রয়েছে ওয়াহিদা বেগমের বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও জানা গেছে।
চলতি বছরের ৯ মার্চ তিনি রাকাবের এমডি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিনি আগের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত সিন্ডিকেট ও প্রভাব খাটানোর প্রবণতা আবারও শুরু করেছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “একজন দণ্ডিত, বিতর্কিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া শুধু আর্থিক খাত নয়, প্রশাসনিক ব্যবস্থাকেও চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।”
সাংবাদিক জাভেদ হোসেন তার অভিযোগপত্রে বলেন, “যিনি আদালতের রায়ে দণ্ডিত এবং যিনি ঘুষ-দুর্নীতির একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত, তাকে রাকাবের মতো প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে রাখা ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং প্রশাসনিক শুদ্ধাচার পরিপন্থী। এতে বিচার বিভাগের আদেশ ও প্রশাসনিক নৈতিকতা হুমকির মুখে পড়ে।”
তিনি অবিলম্বে ওয়াহিদা বেগমকে পদচ্যুত করে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।