শরীফ মেহেদী হাসান, তারাগঞ্জ, রংপুরঃ
উপজেলার বুড়ি হাটে মুচি সম্প্রদায়ের দুইজনকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়
বাংলা মদ কেড়ে নেয়াই টার্গেট ছিল হত্যাকারীদের। ঘটনা দিন ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুর্টেজে চিহ্নিত চিহ্নিত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলে নেপথ্যের সব কারণই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এরা হলেন পাইকার পাড়া গ্রামের বিএনপি কর্মী রুবেল, স্থানীয় কৃষক লীগের কর্মী মেহেদী, একই এলাকার সোহাগ ও সাইফুল। এমনটাই দাবী নিহতরে স্বজনদের।
ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে জড়িত ৫ জনকে চিহ্নিত করা গেলেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না বলে অভিযোগও করেছে নিহত রূপলালের পরিবার।
হত্যার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, নিহত রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাসের স্বজন এবং এলাকাবাসীও ওই পাঁচজনকে ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী রুপলালের মেয়ে নুপুরের বিয়ের আশীর্বাদী অনুষ্ঠানের জন্য তাদের সঙ্গে আনা বাংলা মদ কেড়ে নেয়াই টার্গেট ছিল হত্যাকারীদের।
তবে চিহ্নিত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা গেলে নেপথ্যের সব কারণই নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মনে করেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে আমরা কয়েকজনকে চিহ্নিত করছি। তাদের খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
গত ৯ আগস্ট রাতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট বটতলা এলাকায় ভ্যান চোর আখ্যায়িত করে মব সৃষ্টি করে মুচি সম্প্রদায়ের রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাই প্রদীপ দাসকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
নিহতের রুপলালের পরিবার অভিযোগ করেছেন, রুপলাল দাস ও তার ভাগ্নিজামাইকে ভ্যানসহ আটক করে পেটানো হচ্ছিলো, এরপর যখন তাদের বুড়িরহাট উচ্চবিদ্যালয়ে আনা হয়, তখনও তারা দুজনই জীবিত ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ৫ মিনিট ২১ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও তাদের বাঁচাতে পারেনি। ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠে একটি ভ্যানের ওপর রাখা হয়েছে রুপলাল ও প্রদীপকে। চারপাশে কয়েকশ’ মানুষ প্রথম সারিতে তরুণ ও যুবকরা। পুলিশের চার সদস্য ভ্যানটি ঘিরে বাঁশিতে ফুঁ দিচ্ছিলেন এবং হাত তুলে জনতাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছেন। এ সময় রুপলাল দাঁড়াতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শোয়া অবস্থায় খুলে যাওয়া লুঙ্গি ঠিক করছিলেন তিনি। পুলিশ ধাক্কা দিয়ে জনতাকে সরানোর চেষ্টা করলে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
উশৃংখল জনতার হাত থেকে বাঁচতে হাতজোড় করে আকুতি জানিয়েছিলেন রুপলাল ও প্রদীপ । কিন্তু মন গলেনি সেখানে উপস্থিত থাকা লোকজনের। শোরগোল শুরু হলে পুলিশ নিজেরাই ভয়ে গণপিটুনিতে অর্ধমৃত দু’জনকে উদ্ধার না করে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসে।
অথচ সে সময় পুলিশ যদি থানায় ফোন করে আরও পুলিশের সহায়তা নিতো কিংবা উপজেলায় অবস্থান করা সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতো, তাহলেও রুপলাল ও প্রদীপ দাসকে রক্ষা করা যেত।
এদিকে, ঘটনার এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও মূল নায়করা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় নিহত রুপলালের পরিবার ও স্থানীয় জনতার মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।