হাসপালতাটি ভাসমান একটি জাহাজের ওপর নির্মিত। আর এই হাসপাতালে মিলে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা। বলা যায় এটি একটি ভাসমান জীবনতরী। এ জীবনতরীর নাম হচ্ছে ‘লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’। হাসপাতালটি চালুর পর থেকে চিকিৎসক এবং নার্সরা চরবাসী ও নদী তীরবর্তী দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে লাখো হৃদয়ছোঁয়া ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। চরবাসী ও নদীপারের মানুষের কাছে ‘লাইফবয় ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতাল’ ‘লাইফবয়’ হাসপাতাল নামেই বেশী পরিচিত। দুই দশক আগে ২০১৩ সালে ইউনিলিভারের পণ্য লাইফবয় ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ফ্রেন্ডশিপের সাথে অংশীদারত্বে এ হাসপাতালে ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হয়।
দেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল বা দুর্গম চরের মানুষেরা প্রতিকূল প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেন। কখনো কখনো ঝড়-তুফান, নদীভাঙন বা কন্যা তাদের ঘরবাড়ি, ফল ও গবাদিপশু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
বেঁচে থাকাই যেখানে এক সংগ্রম, সেখানে স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবার সময় মেলে না ওইসব মানুষের। চরবাসীর কারও জীবিকা মাছ ধরা, কৃষিকাজ করা, কিংবা দিনমজুর দেয়া। চিকিৎসার জন্য তাঁরা হাটবাজারে ওষুধের দোকানদারের ওপর নির্ভর করে থাকেন। তাই চরাঞ্চলের হতদরিদ্র ও নদীভাঙন কবলিত মানুষের কাছে হাসপাতালটি যেন দুঃসময়ে সেবা দেওয়ার বন্ধু।
ভাসমান হাসপাতাল গাইবান্ধা সদয় উপজেলায় কামারজানি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীতে ছিল। দেখা যায়, নদীপাড়ের খোলা জায়গায় টিনের বেড়া আর ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে নারী ও পুরুষদের বসার স্থান। অস্ত্রোপচারের রোগীরা প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েক দিন থাকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। আছে রান্নাঘর এবং দো’চালা একটি ঘরে রোগীদের অপেক্ষার কেন্দ্র।
পাড়ে ভেড়ানো জাহাজের ভেতরে নিচের ডেকে থাকেন চিকিৎসক ও কর্মীরা। ওপরের ডেকে দু’টি অস্ত্রোপাচার কক্ষ, গাইনোকলজি বিভাগ, চক্ষু বিভাগ, প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, ডিজিটাল এক্স-রে কক্ষ ও ফার্মেসি। সাথে প্রত্যন্ত চর থেকে রোগী আনতে দু’টি নৌ অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীদের পৌঁছে দেওয়ার জন্য দু’টি ট্রলার রয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ হাসপাতালটি কয়েক মাস পরপর সেবা দেওয়ার স্থান পরিবর্তন করে। গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর ও বগুড়া জেলার প্রায় ১২০ কিলোমিটার নদীপথের নতুন কোনো এলাকায় নোঙর করে। এসব এলাকার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চলের হতদরিদ্র ও নদীভাঙন কবলিত মানুষকে সেবা দেয়।
কামারজানি এলাকার হাজেরা খাতুন বলেন, ‘আমগো তো টেকাপয়সা নাই। কেমনে ওষুধ খামু? গরীবের তো চিকিৎসাও নাই।’ এখানোত আসি ১০ টাকার বিনিময়ে ডাক্তারোক দেখালাম। ওযুধ দিলো। শুধু হাজেরা খাতুন নয়, এ অঞ্চলের শত-শত নারী-পুরুষ এখানে চিকিৎসাসেবা নেওয়ার জন্য ভির করছেন।
হাসপাতালের অস্ত্রোপচার পরবর্তী পর্যবেক্ষণ কক্ষে রোগীদের দেখভাল করছিলেন নার্স শিল্পী শিকদার। হাসপাতালটিতে হয় বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য আসা অনেক রোগী ও স্বজনেরা এখন তাঁকে চেনেন, নাম ধরে খোঁজেন। শিল্পী শিকদার বলেন, ‘অনেককে দেখেছি হাত তুলে প্রাণভরে দো’আ করতে। কেউ কেউ মাথায়ও হাত বুলিয়ে দিয়ে যায়। তখন খুব ভালো লাগে। (সংগৃহীত নিউজ)