আরিফ উদ্দিনঃ ভাদ্র মাসের ভ্যাপসা গরমের মাঝে বর্ষা। এই বর্ষার সাথে জড়িয়ে গেছে ছাতা। ছাতা ছাড়া বর্ষা মৌসুম যেন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু নতুন ছাতা কেনার বদলে পুরোনো ছাতা সারিয়ে নেওয়ার প্রবণতাও বহুদিন আগের। আর এই চাহিদা পূরণ করেন মৌসুমী ছাতা সারাইয়ের কারিগররা। যারা বছরের অন্যান্য সময় অন্য পেশায় থাকলেও বর্ষার শুরুতেই ফিরে আসেন তাদের পুরোনো কারবারে।
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরশহরের বৈরী হরিণমারী গ্রামের ছাতা সারাইয়ের ভ্রাম্যমান কারিগর শহিদুল ইসলাম ৪২ বছর ধরে এ পেশার সাথে যুক্ত আছেন। তিনি বর্ষা মৌসুমে হাট-বাজারসহ গ্রামীণ জনপদে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে ছাতা সারাইয়ের কাজ করে আসছেন। এই ছাতা সারাইয়ের মজুরী দিয়ে যা উপার্জন হয় তাই দিয়ে তার পরিবারের ৫ জন সদস্যের ভরণ পোষন নির্বাহ করেন।
এছাড়াও গ্রামীণ জনপদে বর্ষা আসার আগেই রাস্তার মোড়ে মোড়ে, হাট-বাজারের পাশে অথবা পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে দেখা মেলে এই ছাতা সারাইয়ের কারিগরদের। ভাঙা ছাতা, ছেঁড়া ছাতা, আলগা হয়ে যাওয়া ছাতার শলাকা সবকিছুই যেন তাদের জাদুকরী হাতের ছোঁয়ায় নতুন জীবন ফিরে পায়। ৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যেই ছোটখাটো সারাইয়ের কাজ থেকে শুরু করে কাঠামো পরিবর্তন পর্যন্ত সবধরনের সেবা পাওয়া যায় তাদের কাছে।
ছাতা সারাইয়ের ভ্রাম্যমান কারিগর শহিদুল ইসলাম বলেন, এই পেশা বর্ষাকালের অস্থায়ী কারবার। যেমন লেপ-তোষক সেলাইয়ের ধুনকর, জুতা-স্যান্ডেল মেরামতকারী রবিদাস সম্প্রদায়ের লোকজনসহ অন্যান্য পেশার লোকজনও বর্ষায় বৃষ্টি শুরু হলেই এই পেশাতে ঝুঁকে পড়েন। কেননা বৃষ্টির মৌসুম না এলে সাধারণত মানুষ ছাতা ব্যবহার করেন না। বৃষ্টি শুরু হলেই প্রয়োজন পড়ে বাড়িতে তুলিয়ে রাখা পুরোনো ছাতাটির কথা। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই দীর্ঘ ৮ থেকে ১০ মাস অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা ছাতাটি মেরামত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বর্ষা মৌসুমে। ফলে বর্ষা মৌসুম এলেই ছাতা সারাইয়ের কারিগরদের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ জন্য সুযোগ বুঝে কারিগররা বেশি দামে ছাতা সারাইয়ের কাজটি সম্পন্ন করে থাকেন। আর এ কারণেই অন্য পেশা ছেড়ে এসে অস্থায়ী এবং লাভজনক এই মৌসুমি পেশায় যুক্ত হন তারা।
বর্ষা মৌসুমে ছাতা সারাইয়ের মৌসুমী কারবার প্রসঙ্গে প্রেস কাব পলাশবাড়ীর সভাপতি মন্জুর কাদির মুকুল বলেন, ছাতা সারাই মৌসুমি কারবার হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক কিছু কারণ। ছাতা একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস হলেও এর ব্যবহার মূলত বর্ষা কেন্দ্রিক। ফলে সারাবছর ছাতা সারাইয়ের চাহিদা থাকে না। নতুন ছাতা কেনার চেয়ে পুরোনো ছাতা সারিয়ে নেওয়া তুলনামূলক সাশ্রয়ী। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে এটি একটি বড় সুবিধা। অনেক মানুষ তাদের পুরোনো ছাতার প্রতি এক ধরনের মায়া অনুভব করেন এবং সেটি ফেলে দিতে চান না।
প
লাশবাড়ী পৌরশহরের কালীবাড়ী বাজার স্বর্ণপট্টির রাস্তার পাশে বর্ষা মৌসুমে ছাতা সারাইয়ের রমরমা কারবারে ব্যস্ত সময় পার করেন কারিগররা। এই রাস্তায় একসাথে ৪ থেকে ৬ জন ছাতা মেরামতকারী সারিবদ্ধভাবে বসে কাজ করে থাকেন। এদের মধ্যে আবার অনেকেই অস্থায়ী। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে যেহেতু শ্রমজীবী মানুষের কাজের অভাব থাকে, সেজন্য বিকল্প পেশা হিসেবে তারা ছাতা সারাইয়ের কাজটি শিখে নিয়েছেন। যাতে অভাবের সময়টিতে তারা এই কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন।
এবারের বর্ষাতেও পলাশবাড়ীতে বেড়েছে ছাতা সারাইয়ের কারিগরদের চাহিদা। বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ নষ্ট ছাতা মেরামত করতে ভিড় করছেন ছাতা সারাইয়ের কারিগরদের কাছে।