আবাবো ইতিহাস সাক্ষী রইল সাহস, প্রতিবাদ ও প্রতিজ্ঞার। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ভূমিদস্যুদের প্রাণঘাতি হুমকি উপেক্ষা করে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির ডাকে শুরু হয় লংমার্চ।
গোবিন্দগঞ্জে ইপিজেড প্রকল্প বাতিল এবং সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মের রিকুইজিশনকৃত জমি ফেরত পাওয়ার দাবীতে শনিবার (১৯ জুলাই) সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির ডাকে এ ‘লংমার্চ টু গোবিন্দগঞ্জ’ কর্মসূচি প্রশাসনের আশ্বাসে কায়াগঞ্জ এলাকায় এসে স্থগিত করা হয়।
এদিন সকাল থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে গোবিন্দগঞ্জের কাটামোড় এলাকা। আদিবাসী সাঁওতালদের চোখে মুখে ছিল বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস আর জমি ফিরে পাওয়ার দৃঢ় সংকল্প। ড. ফিলিমন বাসকের নেতৃত্বে শতশত সাঁওতাল-বাঙালি নারী-পুরুষ তীর-ধনুক হাতে, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সাহসের সুরে পথচলা শুরু করেন গোবিন্দগঞ্জের দিকে। লক্ষ্য একটাই জমি ফেরত চাই, বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ফিরে চাই।
তবে লংমার্চটি যখন কায়াগঞ্জ নামক স্থানে পৌঁছায়, তখনই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাসহ লংমার্চকারীদের সাথে একাধিকবার আলোচনা করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয় আদিবাসীদের ভূমি-অধিকারের প্রশ্নে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের দাবী সমূহ উচ্চপর্যায়ে একটি নিরপেক্ষ সমাধানের সুপারিশ করা হবে।
এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ লংমার্চ কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেন এবং ফিরে গিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ২৬ জুলাই। কাটামোড় থেকে ঘোড়াঘাট পর্যন্ত রোডমার্চ।
আজকের কর্মসূচিতে যাঁরা অংশ নেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন—আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম বাবু, সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু, আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুরমু, হিরা মুরমু, বিটিশ সরেন, স্বপন শেখ, রিপন বেশরা ও দিপনসহ অগণিত সাঁওতাল-বাঙালি।
এসময় বক্তারা দাবী করেন, এই লড়াই কেবল জমির নয়, পরিচয়, অধিকার এবং মর্যাদার। সাঁওতালদের ভাষায় ‘আমরা কারও দয়া চাই না, আমরা চাই ন্যায্য অধিকার। বাপ-দাদার জমি আমাদের ফেরত দিতেই হবে। ভূমি আমাদের মা, আমরা লড়ব ফিরে পাবই।’ আজকের দিনটি আবারো মনে করিয়ে দিল, অধিকার আদায়ের পথে বারবার বাঁধা আসবে, কিন্তু লড়াই থামবে না। আন্দোলন থাকবে ততোদিন, যতদিন না ভূমির ওপর সেই অধিকার নিশ্চিত হয়।