মোঃ ফেরদাউছ মিয়া, প্রতিনিধি, পলাশবাড়ী(গাইবান্ধা)
“দেশী ফল বেশি খাই, আসুন ফলের গাছ লাগাই” — এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশের ন্যায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতেও শুরু হয়েছে জাতীয় ফল মেলা। তবে মেলার আয়োজন ও উদ্বোধন ঘিরে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সকাল ১০টায় কৃষি অফিস চত্বরে ফল মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু। তবে উদ্বোধনী আয়োজনটি হয়েছে শুধুমাত্র দাপ্তরিক কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে। বাদ পড়েছেন স্থানীয় কৃষক, গণমাধ্যম কর্মী, এমনকি কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী মূল অংশীদাররাও।
বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, মেলায় প্রদর্শনের জন্য স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত ফল নয়, বরং বাজার থেকে কেনা ফল দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছে—যা পুরো আয়োজনের প্রাসঙ্গিকতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, যেকোনো সরকারি উন্নয়নমূলক কার্যক্রমে গণমাধ্যম কর্মীদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। তাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হন। কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের কোনো প্রকার আমন্ত্রণ বা অংশগ্রহণ ছাড়াই মেলার উদ্বোধন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মী ও কৃষকরা।
এদিকে স্থানীয় কৃষক ও সাংবাদিকদের অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশুর বিরুদ্ধে আগেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। তিনি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে কৃষি উপকরণ বিতরণে অনিয়ম, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বজনপ্রীতি এবং কৃষকদের বঞ্চনার অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ তাকে সেখান থেকে পলাশবাড়ীতে বদলি করে।
পলাশবাড়ীতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে তিনি পূর্বের অনিয়মের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কৃষকদের জন্য বরাদ্দকৃত কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ, ও প্রণোদনা কার্যক্রমে স্বচ্ছতা না থাকা এবং পছন্দের লোকজনের মধ্যে তা বিতরণের অভিযোগ এখন ওপেন সিক্রেট।
সংবাদকর্মীরা এসব বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তার কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি। বরং তিনি এড়িয়ে যান গণমাধ্যম কর্মীদের, যা তার দায়িত্বহীন ও অহংকারপূর্ণ আচরণকে প্রকাশ করে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুল আলম বলেন, “আমি এখানে সদ্য যোগদান করেছি। তারপরও কৃষি কর্মকর্তার নানা অভিযোগ সম্পর্কে কিছুটা অবগত হয়েছি। আজকের ফল মেলায় কৃষক এবং সংবাদকর্মীদের বাদ দেওয়া উচিত হয়নি। কারণ, সংবাদকর্মীরা সমাজের আয়না এবং কৃষকদের উপস্থিতি ছাড়া ফল মেলা অর্থহীন। এটি অবশ্যই অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত একটি ঘটনা।”
উপজেলাবাসী ও সুধী সমাজের প্রত্যাশা—এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে একজন কৃষকবান্ধব, দক্ষ এবং দায়বদ্ধ কৃষি কর্মকর্তাকে পলাশবাড়ীতে পদায়ন করা হবে, যাতে প্রকৃত কৃষকেরা সরকারি সুবিধা ও সেবা সঠিকভাবে পেতে পারেন।