প্রতিবেদক: মোঃ ফেরদাউছ মিয়া, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধাঃ
গাইবান্ধা সদর উপজেলায় ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প’-এর আওতায় ৩ কোটি ৪৪ লক্ষ ৬২ হাজার ৫’শ টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত হোসেনের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে কৃষি আধুনিকায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা থাকলেও বাস্তবে মাঠপর্যায়ে এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়নি।
উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, কৃষি খাতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘স্মার্ট কৃষি পদ্ধতি’ চালু করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৪৮টি আধুনিক কৃষিযন্ত্র—যেমন ৬টি রিপার বাইন্ডার, ৫টি রিপার, ৭টি মেইজ শেলার, ৯টি পাওয়ার থ্রেসার ও ২১টি কম্বাইন হারভেস্টার—কৃষকদের মাঝে বিতরণের দাবি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি যন্ত্রের জন্য ৫০% সরকারি ভর্তুকি এবং বাকিটা কৃষকেরা নিজ খরচে পরিশোধ করেছেন বলেও দাবি বিভাগটির।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ৯টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যুক্ত ছিল এবং ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে মে ২০২৪ পর্যন্ত সময়কালে ৪৮ জন কৃষকের মাঝে যন্ত্র বিতরণ হয়েছে বলে নথিপত্রে উল্লেখ আছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭ জন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠ পর্যায়ে সুবিধা ভোগি কৃষকের তালিকা প্রণয়ন, চুক্তি সম্পাদন, যন্ত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয়, ভর্তুকির অর্থ বরাদ্দ ও অনুমোদন এবং কৃষকের হাতে যন্ত্রপাতি হস্তান্তরসহ সব কাজ তদারকি করেছে মোঃ ইদ্রিস আলী, হাফিজুর রহমান, আরিফিন জামান, সাবিনা ইয়াসমীন, মোঃ ফারুক হোসেন, সাদেকুল ইসলাম ও সৈয়দ সুমন।
তবে বলমঝার ও ঘাগোয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা যথাক্রমে সাবাইনা ইয়াসমিন ও সাদেকুল ইসলাম জানান, তাদের ইউনিয়নে কোনো কৃষক যন্ত্র পাননি, এমনকি প্রকল্প বিষয়ে তাদের কিছু জানাও নেই।অপরদিকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান ফোন রিসিপ না করায় তার মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে সুবিধাভুগির তালিকায় থাকা লক্ষ্মীপুর মালিবাড়ীর কৃষক আব্দুল মান্নান ও খামার বোয়ালীর আরিফুজ্জামান,মোল্লাচরের আবু সাঈদ,বাদশা মিয়া, আব্দুল জলিল, জাহাংগীর আলম,শাহ আলমসহ আরো একাধিক কৃষকের ফোন বন্ধ থাকায় তাদেরকে খুজে পাওয়া যায়নি। বলমঝারের কৃষক পলাশ মণ্ডল দুই রকম মন্তব্য করেন,
একবার বলেন, তাদের যন্ত্রটি কুষ্টিয়ায় ভাড়ায় রয়েছে,আবার বলেন, যন্ত্রটি নষ্ট হওয়ায় বাহিরে মেরামতের কাজ চলছে। অন্যদিকে মোল্লাচরের শাহাদত হোসেন যন্ত্রের বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।
বেশ কয়েকজন কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের কাছে স্মার্ট যন্ত্র কেনার কথা বলে সই নেওয়া হয়। পরে কিছু টাকা দেওয়া হলেও কোনো যন্ত্র পাইনি।”
স্থানীয় কৃষকরাও জানান, এখনও তারা কৃষিকাজে শ্রমিক ব্যবহার করছেন, যন্ত্রের ব্যবহার দেখেননি
অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পটি মূলত কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ,যন্ত্রপাতি সরবরাহের সঠিক কোনো প্রমাণ মেলেনি, অথচ সরকারি নথিতে শতভাগ বিতরণের উল্লেখ রয়েছে। ফলে প্রকল্প নিয়ে কৃষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ অডিট এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহাদত হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে গাইবান্ধা জেলার উপপরিচালক খোরশেদ আলম জানান, “এই প্রকল্প নিয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে বিভাগীয়ভাবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করা হচ্ছে এবং মনিটরিং চলমান রয়েছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”