খবরবাড়ি ডেস্কঃ বন্যা ও নদীভাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্ত গাইবান্ধার সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪ হাজার ২শ’ প্রান্তিক পরিবারের মাঝে কোরবানীর মাংস বিতরণ করেছেন এসকেএস ফাউন্ডেশন।
রোববার (৮ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের ভরতখালীতে অবস্থিত এসকেএস নূতনকুঁড়ি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণে প্রত্যেক পরিবারের মাঝে দুই কেজি করে কোরবানীর মাংস বিভরণ করা হয়।
ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ-এর সহায়তায় বাস্তবায়িত এই উদ্যোগের মাধ্যমে পবিত্র ঈদুল আযহার আনন্দ সকলের মাঝে ভাগ করে নেওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা পূরণে এটি একটি মানবিক প্রয়াস হিসেবে কাজ করছে। উপকারভোগী পরিবারগুলো ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া, ফুলছড়ি, উড়িয়া ও উদাখালী ইউনিয়ন এবং সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী, সাঘাটা, মুক্তিনগর, জুমারবাড়ী ও কামালেরপাড়া ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত।
মাংস পেয়ে খুশি সাঘাটা উপজেলার কচুয়া গ্রামের বেবি (৪৫)। তিনি বলেন, সংসারে দুই মেয়ে ও তিন ছেলে। তার স্বামী মারা গেছে অনেই আগেই। এসকেএস থিকি দুই কেজি গরুর মাংস পাছি। তাই আজ বান্না করি মন ভরি খামো সগলাই।
মুক্তিনগর ইউনিয়নের জামিলা খাতুন বলেন, গত বছর কোরবানীতে মাংস খেয়েছিলাম। আর এ বছর কোরবানিতে এসকেএস থেকে ২ কেজির মাংস পেয়েছি। পরিবারের চার জন সদস্য তা রান্না করে খেয়ে ফেলেছি। মন ভরি আমরা সকলেই খেয়েছি।
গজারিয়া ইউনিয়নের আজিজার রহমান বলেন, নদী ভাঙনের কারণে এ এলাকার অধিকাংশ মানুষ এখন গরিব হয়ে গেছে। যাদের কোরবানী দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। এসর দুস্থ-গরিব মানুষের মাংস কিনে খাওয়া স্বপ্নের মতন ব্যাপার। ঈদের পরে দিন কোরবানির মাংস দিয়েছে এসকেএস। সেটুকু বান্না করে পরিবারের সবাই খেয়েছে।
কোরবানীর মাংস বিতরণ পুর্ব আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন এসকেএস ফাউন্ডেশনের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামস-এর উপ-পরিচালক খন্দকার জাহিদ সরোওয়ার। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার শামছুজ্জামান, টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জাকির হোসাইন, এপিও আহসান হাবিব প্রমুখ। এছাড়াও এসকেএস ফাউন্ডেশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন এসকেএস এন্টারপ্রাইজ হেড অব আবু সাঈদ সুমন এবং এসকেএস রিসোর্স সেন্টারের ম্যানেজার মিজানুর রহমান আকন্দ।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামস-এর উপ-পরিচালক খন্দকার জাহিদ সরোওয়ার বলেন, ‘ঈদের সময় প্রান্তিক পরিবারগুলো যাতে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং পুষ্টিকর খাবার পায়, সে লক্ষ্যেই এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে।’ তাঁরা এসকেএস ফাউন্ডেশন ও ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ-এর এই সম্মিলিত মানবিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন। এটি শুধু একটি সহায়তা নয়, বরং দুই দশকের বেশি সময় ধরে প্রান্তিক মানুষের পাশে দাঁড়ানোর একটি নিঃস্বার্থ প্রয়াস, যা প্রতিবার ঈদের সময় নতুন করে তাদের মুখে হাসি ফোটায়। এবার ১২০টি গরু কোরবানী দেওয়া হয়েছে। মাংস পেয়ে উপকারভোগীরা সন্তোষ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার শামছুজ্জামান বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এবছরেও সুবিধা বঞ্চিত ও দারিদ্রকৃত ৬৯ হাজার পরিবারের মধ্যে মাংস বিতরণ করছে। এই মাংস বিতরণ কার্যক্রম শুধু একটি বিভরণ কার্যক্রম নয়, বরং যে সকল পরিবার সারাবছর মাংস খেতে পারে না, তাদের পারিবারিক পুষ্টি যোগাতেও সাহায্য করবে। এছাড়া এই যে কার্যক্রমটা আছে, আমরা ভবিয্যে চিন্তা করেছি আরো কিভাবে ঈদের বার্তা, বিশেষ করে তাদের সুখ-দুঃখ হিসেবে আনন্দ ভাগাভাগি এবং এসব পরিবারের সামগ্রীক উন্নয়নে আরও অন্যন্যা কার্যক্রম গ্রহণ করা যায় সে বিষয়ে ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ চিন্তাভাবনা করছে।