খবরবাড়ি ডেস্কঃ ঢাকার নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থী এবং গাইবান্ধার ছেলে ধ্রুবব্রত দাস ধ্রুবর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক তদন্তের দাবী জানিয়েছে তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে কলেজের ফটকের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এ দাবী জানায় ধ্রুবর পরিবার ও তার স্বজনরা।
মানববন্ধনে তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থী ধ্রুবব্রত দাস ধ্রুবর অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা পেলেও কলেজ প্রশাসন অসহযোগিতা করছে। ঘটনাটি কলেজ প্রাঙ্গণে ঘটলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কার্যকরী কোনো ভূমিকাই নেয়নি এখনও।
মানববন্ধনে নিহত ধ্রুবর বাবা বানিব্রত দাস চঞ্চল বলেন, গত ১২ মে সোয়া ৩টার দিকে নটরডেম কলেজের ফাদার টিম ভবন থেকে ধ্রুব নিচে পড়ে যায় বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়। কিন্তু কিভাবে সে পড়ে গেছে, এর পেছনে কারণ কী, তা খোলাসা করছেন না কলেজ কর্তৃপক্ষ। আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ দিন হয়ে গেলেও ঘটনার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।
এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। তারা কোনো তদন্ত করছে না। আসলে কীভাবে ধ্রুব মারা গেছে। এর পেছনে কী কারণ, তাও বলছে না কলেজ কর্তৃপক্ষ।
নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ধ্রুবব্রত দাস ধ্রুব। গত ১২ মে পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনার জন্য বাবা বানিব্রত দাস চঞ্চল এবং মা তমা রানী সিং-এর সঙ্গে কলেজে গিয়েছিল ধ্রুব। ছেলেকে ভেতরে পাঠিয়ে তারা কলেজের গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু একটু পর কয়েকজন শিক্ষার্থী ছেলেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ধরাধরি করে ধ্রুবকে বাইরে নিয়ে আসে। প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তবে এই অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে নটরডেম কলেজ কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। কোনো তদন্ত না করায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তের দাবীতে মানববন্ধন করেন তারা।
নিত ধ্রুবর মা তমা রানী সিং বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর সাত দিন পর কলেজ কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করেছি। তাদের জিজ্ঞাসা করেছি, কিভাবে মৃত্যু হয়েছে, সে বিষয়ে তারা কিছুই বলছে না। তাদের কাছে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখার দাবী জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা বলছেন ওই ভবনে কোনো সিসিটিভির কানেকশন ছিল না।
তিনি ভারাক্রান্ত মনে বলেন, সব জায়গাতে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল কিন্তু আমার ছেলে যে ভবনে গেল সেখানেই সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। এর কারণ কি? তাহলে কিভাবে আমার ছেলের মৃত্যু হলো? আমরা তদন্তের দাবী করেছি, কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা করেনি।
তিনি বলেন, এটা হত্যাকান্ড না কি দুর্ঘটনা সে বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষে তদন্ত করে জানাতে হবে। কারণ ঘটনাটি কলেজের ভেতরে ঘটেছে। এর দায় তো কলেজ কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। আমি তাদের কাছে আর্জি জানিয়েছি, কিন্তু তারা এবিষয়ে কোনো সহযোগিতা করছে না।
মানববন্ধনে উপস্থিত স্বজন তামান্না বলেন, কিভাবে এবং কাদের সঙ্গে টিম ফাদার ভবনে ধ্রুব গিয়েছিল তা সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখে শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, টিম ফাদার বিল্ডিং-এর সিসি ক্যামেরা দুটির কানেকশন নেই। যদিও ঘটনার দিন বেলা ৩টা পর্যন্ত ধ্রুব কলেজের গাঙ্গুলী ভবনের সামনে তার অন্য সহপাঠীদের সঙ্গে ছিল। তবে ওই ভবনে ধ্রুবর সঙ্গে তার কোনো সহপাঠীরা গিয়েছিল সেটি ভবনের সিঁড়ি, ক্যান্টিনের আশেপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখেও শনাক্ত করা সম্ভব। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মানববন্ধনে বক্তারা জানান, ধ্রুবব্রত দাস ধ্রুবর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চাই। আমরা আশা করি কলেজ কর্তৃপক্ষ সঠিক তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন। একইসাথে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ থাকবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধ্রুবর অস্বাভাবিক মৃত্যুর সঠিক তদন্ত শেষ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেবেন।