খবরবাড়ি ডেস্কঃ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে উপজেলার দরবস্ত ইউনিয়নের রামনাথপুর এলাকার স্কুল ছাত্র সাব্বিরকে (১৪) অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের দাবীতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহরের চারমাথা মোড়ে অবস্থান নেয় বিক্ষোভকারীরা। এসময় ঢাকা-দিনাজপুর আঞ্চলিক সড়ক এবং ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে ঘন্টাব্যাপী শতশত যানবাহন আটকা পড়ে। বিক্ষোভকারীরা সড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। তাঁরা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা এসে বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলেন, উপজেলা প্রশাসন তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিলে তারা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেয়। পরবর্তীতে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বুলবুল ইসলাম বিক্ষোভকারীদের আশ্বত করে বলেন, সাব্বিরকে অপহরণ ও হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১২ এপ্রিল রাতে রবিউল ইসলাম (১৭) এবং আব্দুল আলীমকে (১৭) গ্রেফতার করা হয়। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বিরকে অপহরণ করার বিষয়টি স্বীকার করেন তারা। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কবিরুল ইসলামকে (২০) গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকা প্রধান আসামী ইউনুস আলীকে (৩৫) ঢাকায় র্যাব গ্রেফতার করে।
গাইবান্ধা পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত এ্যঞ্জেলা জানান, সাব্বির হত্যাকান্ড নিয়ে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় অন্য কোনো ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পেলে তাঁকেও আইনের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
এরআগে এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাব্বির হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবীতে উপজেলার দরবস্ত রামনাথপুর এলাকার বাসিন্দারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিশুবাড়ি দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে চত্বরে সমাবেত হতে থাকে। পরে তাঁরা সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নানা শ্লোগানসহ সাব্বির হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে পৌরশহরের চারমাথা মোড়ে এসে মহাসড়কে অবস্থান নেয়।
বিক্ষোভকারীরা জানান, অপহরণের ৩ দিন পর সাব্বিরের মরদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ আসামীদের ধরতে বিলম্ব করেছে। বরং তারাই ৩ আসামীকে আটক করে পুলিশের কাছে দিয়েছে। শুধু হত্যাই নয় সাব্বিরকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যার পরে তার হাত-পা ভেঙ্গে টয়লেটের সেফটি ট্যাংকে ফেলে দিয়ে মাথায় পাথর চাপা দেয়া হয়েছে। এমন ঘটনা যেন আর কেউ ঘটানোর সাহস না করতে পারে। এ জন্য তারা অপহরণ ও হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির করেন।
উল্লেখ্য; গত ১২ এপ্রিল বিকেলে সাব্বিরের দুইবন্ধু মিলে তাকে বেড়ানোর কথা বলে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে সাহেবগঞ্জ ইক্ষ খামার এলাকায় ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়কে তার ভগ্নিপতি ইউনুস আলীর হাতে তুলে দেয়। তখন তার সাথে থাকা ৪/৫ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি মিলে তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। সন্ধ্যায় সাব্বির বাড়িতে না ফিরলে পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন জায়গায় অনুসন্ধান শেষে অভিযুক্ত দুইবন্ধুর বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দু’জন স্বীকার করে টাকার বিনিময়ে তারা সাব্বিরকে নিয়ে গিয়ে ইউনুস আলীর হাতে তুলে দিয়েছে। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করে রাতে থানায় খবর দিয়ে তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
গত ১৩ এপ্রিল সকালে সাব্বিরের বাবা মোহাম্মদ আলী বাদী হয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানায় অভিযুক্ত ৩ জনসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার এলাকায় টয়লেটের সেফটি ট্যাংক থেকে সাব্বিরের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।