
সরকারি চাকুরিজীবী গণপূর্ত বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কর্মকর্তা মোতাহার মুন্সি (৭০) তাঁর জীবদ্দশায় অর্জিত নগদ অর্থ ও সম্পদ বিক্রয় টাকার ভাগ না দেওয়ায় মৃত্যুর পর মরদেহ দাফন সম্পন্নে সহোদর ২ ভাই-৩ বোনসহ পরিবারের স্বজ্জনরা বাধা প্রদান করেন। দীর্ঘ তিনদিন মধ্যস্থতায় পুলিশ প্রশাসন ও এলাকার জনপ্রতিনিধির হস্তক্ষেপে পারিবারিক বৈঠক, দেন-দরবারের সমঝোতার শর্ত সাপেক্ষ স্বাক্ষরিত ৬০ লাখ টাকার চেক-স্টাম্প হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে মৃত্যুর তিনদিন পর মিললো মরদেহ দাফনের অনুমতি। ধর্মীয় অনুশাসন উপেক্ষা করে এমন স্বার্থান্বেষী আলোচিত-সমালোচিত ও চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার বেতকাপা ইউপির সাকোয়া গ্রামের পল্লীতে।
তথ্যানুসন্ধানে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সাকোয়া গ্রামের মৃত সামছুল হক মুন্সির দ্বিতীয় ছেলে মৃত মোতাহার মুন্সি দাম্পত্য জীবনে ছিলেন নিঃসন্তান। মারজিয়া আক্তার নামে ছিল একমাত্র পালিত কন্যা। চাকুরির সুবাদে মোতাহার মুন্সি ঢাকার কলাবাগান এলাকার নিজবাসায় নিয়মিত বসবাস করতেন। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলরোগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি তার মালিকানাধীন ৫৯ শতাংশ একটি জমি ২ কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। এছাড়া অন্যান্যসহ মৃত ব্যক্তি নামীয় বিশাল অর্থ-সম্পদ থাকায় ঘটে যত বিপত্তি।
এদিন বিধবা স্ত্রী মাসুমা বেগম, পালিত কন্যা মারজিয়া ও স্ত্রী’র বড়ভাই নূরুল ইসলাম কাজী দাফন সম্পন্ন করতে মরদেহ নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান। কিন্তু মৃতের ছোটভাই নজরুল ইসলাম মুন্সি, বোন রাবেয়া বেগম ও লতিফা বেগমসহ পরিবারের অন্যান্যরা তাঁর দাফনকাজে বাধা প্রদান করে। মরদেহ জিম্মি করে স্ত্রী মাসুমা বেগমের নিকট নিঃসন্তান মৃত ভাইয়ের পুঞ্জিভূত সম্পদের বিপরীতে মোটাঅংকের হিস্যা দাবী করে বসে। এসময় মরদেহ রেখর তিনদিন ধরে দফায়-দফায় সমঝোতা বৈঠক চলতে থাকে। কালক্ষেপণের একপর্যায় স্ত্রী কর্তৃক ইসলামী ব্যাংকের বিপরীতে ৬০ লাখ টাকার চেক ও স্ট্যাম্প স্বাক্ষর ও হস্তান্তর সম্পন্ন শেষে দাফনের অনুমতি মেলে। অবশেষে উপস্থিত থানা অফিসার ইনচার্জ আরজু মো. সাজ্জাদ হোসেন, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তা, ইউপি সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও গ্রামবাসির মধ্যস্থতা সমঝোতায় বৃহস্পতিবার ২২ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টায় পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহের দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফন শেষ করেই স্ত্রী-কন্যা এদিন রাতেই ঢাকায় চলে গিয়েছেন বলে জানা যায়।
ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা জানান,ঘটনাটি জানতে পেয়ে অবিরাম বৈঠকে সমঝোতা শেষে দাফনকাজ সম্পন্ন করেন তিনি। অমানবিক এঘটনাটি এলাকার সচেতনসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও চাঞ্চল্যসহ নানা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে।