সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে গিয়ে আটক হয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ৩৪ শিক্ষার্থী। পুলিশ তাদের রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলে আদালতে পাঠালেও বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুর্ভিসন্ধিমূলক বলে মনে করেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তারা বলেছেন, আমাদের সন্তানরা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত নয়। এই ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। এতে আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন।
মঙ্গলবার (১ আগষ্ট) বুয়েট শহীদ মিনারে সন্তানদের আটকের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন তারা। এতে অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন বুয়েটের মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আটক শিক্ষার্থী আলি আম্মার মুয়াজের বড় ভাই আলি আহসান জোনায়েদ।
আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, আফিফ আনোয়ার, বখতিয়ার নাফিস, সাইখ সাদিক, ইসমাইল ইবনে আজাদ, সাব্বির আহম্মেদ, তাজিমুর রাফি, সাদ আদনান অপি, শামীম আল রাজি, আব্দুলাহ আল মুকিত, জায়িম সরকার, হাইছাম বিন মাহবুব, মাহমুদুর হাসান, খালিদ আম্মার, ফাহাদুল ইসলাম, তানভির আরাফাত ফাহিম, এ টি এম আবরার মুহতাদ, ফয়সাল হাবিব, আব্দুল বারি, আনোয়ারুল্লাহ সিদ্দিকী, বাকি বিল্লাহ, মাহাদি হাসান, আলী আম্মার মৌয়াজ, টি এম তানভির হোসেন, রাশেদ রায়হান, সাকিব শাহরিয়ার, ফায়েজ উস সোয়াইব, আব্দুর রাফি, আশ্রাফ আলী, মাহমুদ হাসান, এহসানুল হক, মাঈন উদ্দিন, রাইয়ান আহম্মেদ সাজিদ, তানিমুল ইসলাম ও আব্দুল্লাহ মিয়া।
ঘটনার বর্ণনায় আলি আহসান জোনায়েদ বলেন, গত শনিবার (২৯ জুলাই) সন্তান-স্বজনেরা আমাদের জ্ঞাতসারে ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে টাঙ্গুয়ার হাওরে বেড়াতে যায়। সেখানে বেশ কয়েকজন বুয়েটিয়ানকে পেয়ে তারা আনন্দিত হয়। সবাই একত্রে ঘোরার কথা জানায়। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে তাদের ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমরা মনে করেছি ট্যুরে আছে, হাওর এলাকায় হয়তো নেটওয়ার্ক সমস্যা। এজন্য ফোনে কল যাচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ তাদের ফোনে না পেয়ে আমরা শঙ্কিত হয়ে পড়ি। একই দিন রাত ১০টার দিকে হঠাৎ ফোন করে আমাদের অনেকের কাছেই সন্তানরা তাদের নিজের ও গার্ডিয়ানের ন্যাশনাল আইডি কার্ডের নম্বর জানাতে বলে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকরা জানান, হাওরে নৌকায় ভ্রমণের সময় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে পুলিশ তাদের আটক করেছে বলে জানায়। তারা এও বলেছে তাহিরপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাদের। জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; এরপর আইডি কার্ডের নম্বর নেওয়ার পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে। তারা ফোনে শুধু এতটুকুই বলতে পারে। কিন্তু এরবেশি কথা বলতে দেওয়া হয়নি কাউকে। পরে ফোন নিয়ে নেওয়া হয়। এরপর থেকে আমরা তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
তারা বলেন, আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদের আটক করা হয়েছে। অনেক উদ্বিগ্নতার পরে গতকাল বিকেলে সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা আশ্চর্যান্বিত হই। আমরা মনে করি, এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুর্ভিসন্ধিমূলক। অভিভাবকদের অভিযোগ— স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগাজনকভাবে আমরা কারো সাথেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।
শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা কখনো রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল না। মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড এবং ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
উল্লেখ্য, হাওরে ঘুরে বেড়ানোর সময় বুয়েটের বর্তমান ও প্রাক্তন ৩৪ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। এরপর তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেওয়া হয়।