
সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, তবু কিছু মানুষ সরকারের উন্নয়ন দেখে না বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদেরকে চোখ থাকতে অন্ধ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাদের প্রতি করুণা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
শনিবার (১ জুলাই) দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দেশের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করবোই। যারা চায়নি দেশের উন্নয়ন হোক এটা তাদের প্রতি আমার চ্যালেঞ্জ।
তিনি আরও বলেন, যারা চায়নি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক, মানুষ পেট ভরে ভাত খাক, শিক্ষা পাক, মাথা গোঁজার ঠাঁই পাক, তারা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গেছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করতে পেরেছি। এটাই সবচেয়ে বড় কথা।
এ সময় নিজ এলাকার উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, আমার এলাকার কোনো উন্নয়ন যেন বাদ না যায়। কেথায় কী হচ্ছে সব আমি খোঁজ রাখি। আমার কাছে সব রাস্তাঘাটের আলাদা আলাদা ফাইল করা আছে। শুধু কোটালীপাড়া, টুঙ্গীপাড়া না- পুরো দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।
আর এই উন্নয়নের শক্তি আপনারাই জুগিয়েছেন। আপনারাই আমার বড় শক্তি। আপনারা আছেন বলে আমি দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাবার স্বপ্ন পূরণ করে উন্নত দেশ গড়াই আমার লক্ষ্য। দেশে একজনও হতদরিদ্র থাকবে না। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারে, সেটাই আমি চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের একজন মানুষও হতদরিদ্র থাকবে না। সে জন্যই আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা মাত্র পাঁচ শতাংশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা এই দেশ স্বাধীন করে গেছেন। তার স্বপ্ন পূরণ করে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়া আমার লক্ষ্য। প্রত্যেকেরই ঘর-জমি ও জীবিকার ব্যবস্থা আমরা করতে পারব, ইনশাল্লাহ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আড়াই কোটি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিচ্ছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ওষুধ দিচ্ছি, শিক্ষার ব্যবস্থা করছি। এ ছাড়া বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজের মধ্য দিয়ে আমরা মানুষকে সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রচণ্ড খাদ্যের অভাব। তাই আমাদের সব অনাবাদি জমি আবাদ করতে হবে। যাতে করে আমাদের খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে না হয়। এ সময়ে বৃষ্টি হওয়াতে অনেকের অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু তারপরেও বৃষ্টি আমাদের জন্য আশীর্বাদ। আমাদের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ নির্বাচনি এলাকা কোটালীপাড়ায় পৌঁছান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছেলে এবং তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়া পৌঁছে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় প্রাঙ্গণে নিম (মারগোসল), বকুল (স্প্যানিশ চেরি) এবং আমের তিনটি চারা রোপণ করেন। পরে তিনি নবনির্মিত কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিস উদ্বোধন করেন।
সরকারপ্রধান কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় মিলিত হন।
অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী বিকেলে পৈতৃক নিবাস টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে কোটালীপাড়া ত্যাগ করবেন। সেখানে পৌঁছে দেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাতে যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর টুঙ্গিপাড়ায় রাত্রিযাপনের কথা রয়েছে। আগামীকাল রোববার সকালে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনসাধারণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন সরকারপ্রধান।