
গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরশহরের গিরিধারীপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহহীন বৃদ্ধা রেনুবালা মহন্তকে (৭৫) আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর দেয়ার কথা বলে উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল ৬ হাজার টাকা ঘুষ নেয়। অবশেষে ঘর দেয়ার নামে বৃদ্ধা রেনুবালার প্রদেয় টাকা ফেরৎ দিলেন সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল।
ভুক্তভোগী ও উপস্থিত স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পলাশবাড়ী পৌরশহরের গিরিধারীপুর এলাকার বাসিন্দা প্রয়াত সুনীল চন্দ্র মহন্তের বিধবা স্ত্রী দীর্ঘদিন থেকে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীসহ মেথরপট্টি এলাকায় অন্যের ভাঙ্গাচুড়া ঘরে বসবাস করে আসছেন। আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়ার আসায় উপজেলা ভূমি অফিসের সুইপার শ্যামলের মাধ্যমে বৃদ্ধা রেনুবালা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলকে ৬ হাজার টাকা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে তৃতীয় পর্যায় (২য় ধাপে) এ উপজেলায় জমি এবং ঘর হস্তান্তর কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বৃদ্ধা রেনুবালা ঘরের জন্য দিনের পর দিন ভূমি অফিসে ঘুরতে থাকে। ঘর পাওয়ার বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় প্রদেয় টাকা ফেরৎ চাইলে ইব্রাহিম খলিল নানা তালবাহানা ছাড়াও হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে কোন উপায় না পেয়ে সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে ভুমিহীন ও গৃহহীন বৃদ্ধা রেনুবালা তার দুই ছেলেকে নিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসে এসে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলের রুমে ঢুকে তাঁর নিকট প্রদেয় টাকা ফেরৎ চাইলে উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। স্থানীয়দের উপস্থিতির মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীরা ভূমি অফিসে হাজির হলে ভূক্তভোগী বৃদ্ধার কাছে জানতে চাইলে তড়িঘড়ি করে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই বৃদ্ধা রেনুবালার টাকা ফেরৎ দেয়। এসময় রেনুবালার ছেলে নিরু চন্দ্র মহন্ত ও বিরু চন্দ্র মহন্ত উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু গণমাধ্যমকর্মীদের ক্যামেরার সামনে অত্রাফিসের সুইপার শ্যামল চন্দ্র জানান, সার্ভেয়ার ইব্রহিম খলিল স্যারের নির্দেশে ঘর দেয়ার কথা বলে বৃদ্ধার নিকট থেকে টাকা এনে তাঁকে দিয়েছি।
এদিকে; বৃদ্ধা রেনুবালার নিকট হতে টাকা গ্রহণের বিষয়ে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল ক্যামেরার সামনে অস্বীকার করেন।
রেনুবালার ছেলেরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে জমি ও ঘর পাওয়ার আশায় ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলকে টাকা দিয়েও ঘর বা জমি না পাওয়ায় প্রদেয় টাকা ফেরৎ চাইলেই নানা তালবাহানাসহ হুমকি-ধামকি এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এরআগে ২ হাজার টাকা ফেরৎ দেয় আজ (৮ আগস্ট) রাতে বাকি টাকা ফেরৎ চাইলে ইব্রাহিম খলিল আমাদের গালমন্দ করতে থাকে। এতে করে তাঁর কথার প্রতিবাদ করলে বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। এ খবরে উপস্থিত অন্যান্যরাসহ আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা আসলেন। পরে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল বিষয়টি বেগতিক দেখে আপনাদের সামনে বাকি টাকা ফেরৎ দিল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান নয়ন নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগীদের নিকট হতে টাকা গ্রহণ সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে আশ্রায়ণ প্রকল্পের জমি ও ঘর হস্তান্তর সংক্রান্ত বিষয়ে সুবিধাভোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং সহকারি কমিশনার (ভূমি) মাঠ পর্যায়ে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রকৃত ভূমিহীন-গৃহহীনদের নাম প্রস্তুত করা হয়। পলাশবাড়ী সহকারি কমিশনার (ভূমি) পদটি ফাঁকা থাকায় শত ব্যস্ততার মাঝেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সবকিছু দেখভাল করতে হয়। সেই সুযোগে হয়তো বা সার্ভেয়ার ইব্রহিম খলিল এসব দূর্ণীতির আশ্রয়ণ গ্রহণ করেছেন বলে এলাকার সচেতনমহলের দাবী।
পরবর্তীতে সুবিধাভোগী বঞ্চিতরা তাদের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলকে যারা বেশি টাকা দিতে পেরেছে তারই জমি এবং ঘর পেয়েছে। তারপরও যাদের জমি বা অর্থবিত্ত রয়েছেন এমন ব্যক্তিকে ঘর দেয়াসহ একাধিক ভূক্তভোগীর নিকট হতে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিল টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়াও ভূমি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য কাজ করে না। এসব কাজে তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা না দিলে বিভিন্ন অজুহাতে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকে। ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খলিলসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের অনিয়ম এবং দূর্ণীতি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানান ভূক্তভোগী জনসাধরণ ও এলাকার সচেতন মহল।
উল্লেখ্য; মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে ভুমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদের মধ্যে তৃতীয় পর্যায় (২য় ধাপে) গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলায় ১৪০টি পরিবারকে ইতোমধ্যে জমি ও গৃহ হস্তান্তর করা হয়েছে।