
২২০ রানের বিশাল জয়ে জিম্বাবুয়ের মাটিতে একমাত্র টেস্টের ট্রফি নিশ্চিত করলো বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের ২২০ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা, যা দেশের বাইরে সবচেয়ে বড় জয়।
আজ রোববার হারারেতে একমাত্র টেস্টের পঞ্চম দিনে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদশের দেওয়া ৪৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ২৫৬ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। প্রথম ইনিংসে টসে জিতে ব্যাট করে ৪৬৮ রান তোলে টাইগাররা। দ্বিতীয় ইনিংসেও এক উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান করে লিড ঘোষণা করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস মোকাবিলায় ১৯২ রান বাকি থাকতেই লুটিয়ে যায় জিম্বাবুয়ের ব্যাটিং লাইনআপ। দ্বিতীয় ইনিংসে এসে ২২০ রান বাকি থাকতেই হেরে যায় স্বাগতিকরা। বাংলাদেশ পায় নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বড় জয়। রানের দিক থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ২২৬ রানে, ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে, প্রতিপক্ষ ছিল এই জিম্বাবুয়েই।

শনিবার চতুর্থ দিন শেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ১৪০ রান। উইকেটে ছিলেন মায়ার্স ও তিরিপানো। শেষ দিনে জয়ের জন্য জিম্বাবুয়ের দরকার ছিল ৩৩৭ রান। বাংলাদেশের দরকার ৭ উইকেট।
দিনের শুরুটা হয় বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের মহড়া দিয়ে। ৫০তম ওভারে প্রথম ক্যাচ মিস। সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মায়ার্স। তা নিতে পারেননি লিটন দাস।
৫৩তম ওভারে নিজের বলে ক্যাচ মিস করেন তাসকিন। যদিও অনেকটা লো ছিল ক্যাচটি। তারপরও লম্বাকৃতির তাসকিনের ক্যাচটি নেয়া উচিত ছিল। পারেননি। বেঁচে যান মায়ার্স। ৫৬তম ওভারের শেষ বলে মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন তিরিপানো। সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি এবার সাকিব।
তিন ক্যাচ মিসের পর স্বভাবতই হতাশ ছিল বাংলাদেশ। এক ওভার পর সেই হতাশা দূর করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৫৮তম ওভারের প্রথম বলে মিরাজের বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দেন মায়ার্স। তা মুঠোবন্দী করতে ভুল করেননি সাদমান ইসলাম। ৮৮ বলে ২৬ রান করে ফেরেন তিনি।
একই ওভারের চতুর্থ বলে আবার মিরাজের আঘাত। রানের খাতা খুলতে না পারা মারুমাকে এলবির শিকার করেন মিরাজ। পরের ওভারে তাসকিন ঝলক। রয় কাইয়াকে এলবিডব্লিউ করেন তিনি। রয়ও রানের খাতা খুলতে পারেনি। এক রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
কয়েক ওভার পর আবার তাসকিনের রুদ্ররূপ দেখে জিম্বাবুয়ে। দলীয় ১৬৪ রানের মাথায় রেগিস চাকাভাকে (১) বোল্ড করেন তিনি। সাত উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা জিম্বাবুয়েকে তখন এগিয়ে নিতে থাকেন তিরিপানো ও নাউচি।
৬৩তম ওভারের তৃতীয় বলে নাউচির স্টাম্প উপড়ে ফেলেন তাসকিন। কিন্তু বিধিবাম, নো বল থাকায় বেঁচে যান নাউচি। পরের বলে কট আউটের জোড়ালো আবেদন থাকলেও সাড়া দেননি আম্পায়ার।
দলীয় ১৯৮ রানের মাথায় এই জুটি বিচ্ছিন্ন করেন তাসকিনই। ভিক্টর নাউচিকে সাকিবের হাতে ক্যাচ বানান তিনি। ৫৪ বলে ১০ রান করেন তিনি। পেসার মুজারাবানির সঙ্গে তিরিপানোর রসায়নটা ছিল বেশ।
এরই মধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি করেন তিরিপানো। আর সবাই যখন ব্যর্থ, তখন তিরিপানোকে সাজঘরে পাঠিয়ে বাংলাদেশের জয় প্রায় সুনিশ্চিত করেন পেসার এবাদত হোসেন। উইকেটের পেছনে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন ১৪৪ বলে ৫২ রান করা তিরিপানো। দলীয় রান তখন জিম্বাবুয়ের ২৩৯। শেষটা করেন মিরাজ। এনগারাভাকে (১০) বোল্ড করে দলকে জয় পাইয়ে দেন। মুজারাবানি ৩০ রানে থাকেন অপরাজিত।
বিরতির আগে-পরে আবারও জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা প্রতিরোধ গড়েতে চেষ্টা করে। কিন্তু দুই পেসার তাসকিন ও ইবাদতের বোলিং সাফল্যে বাংলাদেশের জয় আটকাতে পারেননি তারা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়েছেন রিচার্ড এনগারাভা। প্রথম ইনিংসের দুর্দান্ত মিরাজ এ ইনিংসেও পেয়েছেন চার উইকেট। এ ছাড়াও তাসকিন ৪ উইকেট শিকার করেন। সাকিব ও ইবাদত পেয়েছেন ১টি করে উইকেট। পুরো সিরিজে ৯ উইকেট শিকার করেন মিরাজ। ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ছিলেন ১৫০ রানে অপরাজিত।