ঘণ্টায় দেড়শ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে তাণ্ডব চালাতে চালাতে ভারতের ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে উঠে এসেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে লন্ডভন্ড হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা। সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে দিঘা শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইয়াসের তাণ্ডবে ওড়িশায় দুইজন ও পশ্চিমবঙ্গে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
উত্তাল সমুদ্রের পানি বাঁধ টপকে ঢুকছে বসতি-রাস্তায়। প্লাবিত হয়েছে মন্দারমনি, তাজপুরও। রাস্তা টপকে হোটেলেও ঢুকেছে পানি। ডুবে গেছে সমুদ্র সংলগ্ন দোকানগুলোও। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা সম্পূর্ণ খালি করতে কোমরবেঁধে নেমেছে প্রশাসন। উদ্ধারকাজের জন্য ইতোমধ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
ওড়িশার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় চলছে ভারি বর্ষণ। উপকূলের নিচু এলাকায় কয়েক হাজার কাঁচা ঘর জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে, ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা।
ভারতের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।
বেলা সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রভাগ বা চোখ বালাশোরের কাছ দিয়ে পুরোপুরি স্থলভাগে উঠে আসে। তখন এর কেন্দ্রে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
স্থালভাগে উঠে আসার সময় স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দুর্বল হতে শুরু করে এ ঝড়। আগামী ছয় ঘণ্টায় তা বৃষ্টি ঝড়িয়ে আরও দুর্বল হতে থাকবে এবং ওড়িশার ময়ূরবাহন জেলার ওপর দিয়ে মধ্যরাত নাগাদ ঝাড়খণ্ডে পৌঁছাবে বলে ভারতীয় আবহাওয়াবিদদের ধারণা।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় তার অফিস নবান্নে বসে পর্যবেক্ষণ করছেন পুরো পরিস্থিতি। তিনি জানিয়েছেন, তার রাজ্যে অন্তত ২০ হাজার কাঁচা ঘর হয় ধ্বংস হয়েছে, নয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মমতার দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, উপকূলবর্তী এলাকায় ৭০ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বহু বাঁধ ভেঙেছে। নন্দীগ্রামেও জল ঢুকেছে। এই পরিস্থিতেও দিশা না হারিয়ে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলানোর বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
তার মন্ত্রিসভার সদস্য বঙ্কিম হাজরা বলেছেন, দীঘার নিচু এলাকা জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে।
ওড়িশার জগৎসিংহপুরে একটি নৌকা ঝড়ের কবলে পড়ার পর পুলিশ ১০ জনকে উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক ও বালাশোর জেলা ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা লেগেছে সবচেয়ে বেশি। আর পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদেনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছেছে ঝড়ো বাতাসের তাণ্ডব।
দিঘা শহরের সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকাগুলোয় পানি ঢুকে পড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় সেখানে পানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়েছে অনেক বাড়িতে। পানি উঠেছে মূল রাস্তায়।
স্থানীয়রা বলছেন, দিঘার এমন ভয়াল রূপ আগে কখনও দেখেননি তারা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে তীব্র গতিতে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে অবিরাম বৃষ্টি। পানির তোড়ে আশপাশের দোকানগুলো ভেসে যায়। ডুবে যায় রাস্তার ওপর দাঁড় করানো মোটরবাইক ও গাড়ি।
মন্দারমণিতে ভয়াবহ প্রভাব দেখায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আশপাশের অধিকাংশ হোটেলে পানি ঢুকে যায়। রাস্তা টপকে গ্রামগুলোতেও জল ঢুকতে শুরু করে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় বেশ কিছু বাড়ির চাল। ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক দোকান-বাড়ি।
এরপর নামানো হয় সেনাবাহিনী। দোকানমালিকদের জিনিসপত্র উদ্ধারে সাহায্য করতে দেখা যায় তাদের। এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের কলকাতা কার্যালয় বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ছয় ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে হলদিয়াতেও। হলদি নদীতে জলোচ্ছ্বাসের জেরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে হলদিয়ার শিল্পাঞ্চলে। বাঁধ ভেঙে নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি ঢোকার আশঙ্কায় দোকানের শাটার বেঁধে রাখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।